মধুমাসে রংপুরে জামাই ষষ্ঠী

মধুমাসে জামাই ষষ্ঠী বাংলার লোক সংস্কৃতির একটি অংশ। এ উৎসবটি আদিকাল থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাজের ঘরে ঘরে লোকাচার হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রংপুর মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়া মদন মোহন ঠাকুরবাড়ির আখড়ায় (মন্দির) ষষ্ঠী পূজার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের বউ-শাশুড়িরা হরেক রকমের ফল ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে ডালা সাজিয়ে মন্দিরে উপস্থিত হন।

পরে মন্দিরের পূজারি সব জীবের মঙ্গল কামনা করে পূজা-আর্চনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সভাপতি নিখিলেন্দ্র সরকার গুহ রায়, সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার দাস, সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার দে ও কোষাধ্যক্ষ চন্দ্রজিৎ দাস প্রমুখ।

স্থানীয়রা জানায়, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে সনাতন সম্প্রদায়ের নারীরা ষষ্ঠী ব্রত পালন করেন। এ ষষ্ঠী ব্রত উপলক্ষে জামাইকে দেওয়া শাশুড়ির সংবর্ধনাই মূলত জামাই ষষ্ঠী। এক সময় প্রথাটি এ দেশের গ্রামে ও শহরের ঘরে-ঘরে পালিত হতো। কালের বিবর্তনে এ প্রথায় ভাটা পড়েছে। তবে জামাই ষষ্ঠীর রেওয়াজটা সমাজ থেকে একবারে উঠে যায়নি।

'

আরও পড়ুন: মিথিলার বাড়ি থেকে জামাই ষষ্ঠীর আদর পেলেন না সৃজিত 

মধুমাসে জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে অর্চনার পর্ব দেশের কোথাও কোথাও ঘরে, উঠানে ও মন্দিরে আয়োজন করা হয়। আবার কোনো অঞ্চলে বটের ডাল, ডুমুরের ডাল বা করমচার ডাল উঠানে পুঁতে বন বা অরণ্য তৈরি করে ষষ্ঠীর অর্চনা করা হয়।

শাশুড়ি যতদিন বেঁচে থাকেন জামাই ষষ্ঠীর দিন শাশুড়ির কাছ থেকে জামাই নতুন কাপড়, আদর-আপ্যায়ন, পারিতোষিক ও সংবর্ধনা পাবেন। মূলত জামাই ষষ্ঠীর সব আয়োজন করা হয় জামাইকে কেন্দ্র করে। সনাতন ধর্মে ষষ্ঠী দেবী মাতৃত্বের প্রতীক বা জননী। তিনি সন্তান কোলে ধারণ করে থাকেন। মায়ের পূজা শেষে তার কাছে জামাইয়ের দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করা হয়।

পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে আসে জামাই সংবর্ধনা পর্ব। এ পর্বে দুপুরে থাকে ভূড়িভোজ, মাছ-মাংসের হরেক রকম লোভনীয় তরকারি, রকমারি বড়া ভাজা, চাটনি, দই, মিষ্টি, আম-দুধ, কাঁঠালসহ মধু মাসের সব ফল ফলাদি। এদিন সকাল থেকে শাশুড়িরা উপোষ থেকে জামাই ভোজের রান্নাবান্না করেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের জামাই ষষ্ঠীর মূল উপকরণ হচ্ছে ফল। ফল ছাড়া জামাই ষষ্ঠীর পর্ব থাকে অসমাপ্ত।

জিতু কবীর/আরএইচ/জিকেএস