নবজাতক বিক্রি করে বিল পরিশোধ, হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৬:২০ পিএম, ২৭ মে ২০২৩

গাজীপুরের শ্রীপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের পর নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন এক দম্পতি। শ্রীপুর পৌরসভার ‘শ্রীপুর চৌরাস্তা নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে’ এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে প্রশাসন শুক্রবার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৭টায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন।

নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা রাসেল জানান, প্রসব ব্যথা উঠলে স্ত্রীকে গত রোববার (২১ মে) বেলা ১১টায় শ্রীপুর চৌরাস্তা নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ওই হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর তার স্ত্রীকে পরীক্ষা করে ওইদিনই সিজারিয়ান অপারেশন করার পরামর্শ দেন। দ্রুত অপারেশন না করালে উভয়ের (মা ও নবজাতক) সমস্যা হওয়ার কথা জানান।

এসময় রাসেল তার কাছে সিজার করার টাকা না থাকার কথা জানান হাসপাতাল পরিচালককে। এ কথা শুনে পরিচালক রাসেল ও তার স্ত্রীকে নবজাতক বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ছেলে নবজাতক হলে ৫০ হাজার এবং মেয়ে হলে ৩০ হাজার টাকা দেবেন। তবে সিজারিয়ান খরচের টাকা পরিশোধের পর তাদের বাকি টাকা দেওয়ার কথা জানান। পরে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় সিজারিয়ান অপারেশন করালে তাদের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

পরদিন সোমবার (২২ মে) হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির কাছে রাসেলের নবজাতক মেয়েকে বিক্রি করে দেন। তাদের সন্তানকে কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছেন বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে জাহাঙ্গীর সেই ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখেন। পরে জাহাঙ্গীর ওই দম্পতির কাছে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে বলেন, তাদের সন্তানকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ওই টাকার মধ্যে ১৬ হাজার টাকা হাসপাতালের সিজারিয়ান বিল পরিশোধ করে বাকি ১৪ হাজার টাকা তাদের দেন।

এদিকে, বুধবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা হাসপাতালে গিয়ে তথ্য চাইলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

রাসেল শ্রীপুর পৌরসভায় ভাড়া থাকেন। তাদের সংসারে চার ও পাঁচ বছরের আরও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রাসেল এলাকায় দিনমজুরের কাজ করেন এবং তার স্ত্রী গৃহিণী। রাসেল ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার বাসিন্দা। তারা প্রায় দুই মাস ধরে শ্রীপুরে বসবাস করছেন।

হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর বলেন, ওই দম্পতির সম্মতি নিয়েই সিজার করা হয়েছে এবং তাদের নবজাতককে তারাই বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন।

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন বলেন, বিষয়টি জানার পর শুক্রবার (২৬ মে) শ্রীপুর চৌরাস্তা নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় ওই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো. নাসিম বলেন, নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি এবং জানতে পেরেছি ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, নবজাতক বিক্রির বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন এবং অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মো. আমিনুল ইসলাম/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।