কম দামে ইট বিক্রির প্রলোভনে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ২৮ মে ২০২৩

রংপুরে মাহফুজার রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভাটা থেকে কম দামে ইট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তের প্রতারণার ফাঁদ থেকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পও রক্ষা পায়নি। এ ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

রোববার (২৮ মে) দুপুরে রংপুর প্রেস ক্লাব হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন আমিনুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী ইটভাটা ব্যবসায়ী। এসময় বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্কুরণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামে একটি ইটভাটা স্থাপনের মধ্যদিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেন নগরীর আরাজী তাজহাট এলাকার বাসিন্দা মাহফুজার রহমান। ইটভাটার ব্যবসার শুরুতে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে মালামাল কেনেন। পরবর্তীসময় কম দামে ইট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেওয়া শুরু করেন। অগ্রিম টাকা নেওয়ার সময় আস্থা অর্জনের কৌশল হিসেবে মাহফুজার রহমান ক্রেতাদের কাউকে চেক, কাউকে স্ট্যাম্পে অর্থপ্রাপ্তির অঙ্গীকারনামা আবার কাউকে ভাটার মানি রিসিট দেন। এভাবে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মাহফুজার রহমান।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলেন, ২০২০ সালে ভাটার মালিকানা শেয়ার বাবদ ২৫ লাখ টাকা দিয়ে আমি তার ভাটা ব্যবসার অংশীদার হই। পরে জানতে পারি, তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ইট দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব বিষয় জানাজানি হলে মাহফুজার রহমান আত্মগোপনে চলে যান। এমনকি কাউনিয়া উপজেলা প্রশাসনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য ইট দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে ওই টাকার সমপরিমাণ ইট আমি তাদের দিয়েছি।

jagonews24

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, আমি মাহফুজার রহমানকে ২০২১ সালে আইনি নোটিশ দেই। পাশাপাশি জমির মালিকের জমি ভাড়ার টাকা পরিশোধ করার জন্যও নোটিশ দেই। কিন্তু তাতে তার কোনো সাড়া মেলেনি। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, তার পাওনাদার ও জমির মালিকদের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে ভাটা পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেই। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিকে পুনরায় ভাটা চালু করে স্থানীয় পাওনাদারদের প্রায় ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। ২০২২-২৩ অর্থঅছরে অগ্রিম ইট বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৯০ লাখ টাকা এবং আমার জমি বিক্রির ২০ লাখ টাকা দিয়ে পুনরায় ইট উৎপাদন শুরু করি।

ভুক্তভোগী বলেন, ভাটার কার্যক্রম চালাকালে মাহফুজার রহমান আমার নামে মিথ্যা মামলা এবং ভাটা বন্ধে আদালতে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করেন। তার এক নিকটাত্মীয় পুলিশ হওয়ায় তার ক্ষমতায় তিনি এসব করছেন। সে কারণে আমি পুলিশ প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ভাটায় প্রায় সাত লাখ কাঁচা ইট প্রস্তুত রয়েছে। এর পেছনে খরচ ৩৫ লাখ টাকা। সেসব এখন নষ্টের উপক্রম হয়েছে। এগুলো নষ্ট হলে পুরোটাই ক্ষতি হবে। এ অবস্থায় আমিসহ ভুক্তভোগী সবাই প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

একটি মামলায় কারাগারে থাকায় অভিযুক্ত মাহফুজার রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ গাফফারুল ইসলাম অতুল, আজমল হোসেন খান, আসাদুজ্জামান, দুলাল মিয়া, হায়দার আলী, সাদ্দাম হোসেন, জাকির হোসেন লেবু, হারুল মিয়া, শফিকুল ইসলাম, মাহাদ হোসেন পিন্টুসহ অন্যান্য পাওনাদাররা উপস্থিত ছিলেন।

জিতু কবীর/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।