রাজশাহীর নির্মল বাতাস ধরে রেখেছে পরিবেশবান্ধব অটোরিকশা
রাজশাহীর গণপরিবহন মানেই অটোরিকশা। শহরের যেখানেই তাকাবেন না কেন দেখা মেলে এ পরিবহনের। এগুলো ব্যাটারিচালিত। কোনো ধোঁয়া বের হয় না। তাই বলা চলে রাজশাহীর নির্মল বাতাস ধরে রেখেছে এ পরিবহন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তথ্যমতে, রাজশাহীতে ২০১০ সালে প্রথম চালু হয় পরিবেশবান্ধব অটোরিকশা। তবে শুরুতে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। চিকন চাকা ও ব্রেক ঠিকমতো কাজ না করায় ২০১৮ সালে আধুনিক অটোরিকশা ও তার লাইসেন্স ইস্যু করে সিটি করপোরেশন। রাজশাহী নগরীতে ছয় আসনের ১০ হাজার ও দুই আসনের পাঁচ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আছে।
অটোরিকশা চালানোর জন্য স্মার্ট লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় রাসিক। এ খাত থেকে সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য আয় ধরা হয় বাৎসরিক চার কোটি টাকা। তবে বকেয়ার কারণে আয় হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা।
নগরবাসী বলছেন, নগরীতে প্রতিদিন যে পরিমাণ যানবহন চলাচল করে সেগুলোতে যদি জ্বালানি ব্যবহার করা হতো তাহলে রাজশাহীর বাতাস আর নির্মল থাকতো না। শুধু অটোরিকশা চলায় নগরীতে মিলছে বিশুদ্ধ বাতাস।
নগরীর সাহেববাজার থেকে অটোরিকশায় করে রেলওয়ে স্টেশন যাচ্ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আতাউর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে রাজশাহীতে পড়াশোনা করছি। তখন থেকেই অটোতে (অটোরিকশা) যাতায়াত করি। অটোতে যাতায়াতে খরচ কম হয়। তাই ছাত্ররা বেশিরভাই অটোতে চলাচল করেন।’
তিনি বলেন, ‘শুধু খরচ কম হয় তা নয়; আমরা যখন অন্য কোনো জেলায় যায় যেখানে সেখানে দেখা যায় একটু পর পর বাসসহ অন্যান্য যানবাহন ছেড়ে যাচ্ছে। ধোঁয়া আর গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। রাজশাহীর অটোরিকশাগুলো ব্যাটারিচালিত। বিদ্যুতে চার্জ দেওয়া হয়। এজন্য এগুলো পরিবেশবান্ধব।’
নগরীর রেলগেটে অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাগরপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল হক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অটোরিকশা আমাদের শহরের বাতাসকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ শহরে প্রতিদিন যে পরিমাণ অটোরিকশা চলে সবগুলো যদি সিএনজিচালিত হতো তাহলে ধোঁয়াতে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেতো। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের শহরে গণপরিহন হিসেবে কোনো বাস বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নেই।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ঈ-সাইদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের শহরে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। এগুলো থেকে যেমন পরিবেশ রক্ষা পায়, তেমনই আমাদের রাজস্বও আসে। বর্তমানে প্রতি অর্থবছরে গড়ে চার কোট টাকা রাজম্ব আসে এ পরিবহন থেকে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক তন্ময় কুমায় স্যান্নাল বলেন, রাজশাহীতে শুরু থেকেই তেমন কোনো গণপরিবহন ছিল না। প্রথমে ঘোড়ার গাড়ি পরে রিকশা আসে। এখন চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এটি আমাদের পরিবেশকে ঠিক রাখে। তবে ব্যাটারিগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর সেগুলো যত্রতন্ত্র পোড়ানো হয়। এটি আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটির জন্য নির্ধারিত একটি অঞ্চল করে দেওয়া দরকার। যাতে আমাদের নির্মল বাতাস নষ্ট না হয়ে যায়।
সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/জেআইএম