সংযোগ সড়কের অভাবে কাজে আসছে না সেতু

আব্দুস সালাম আরিফ আব্দুস সালাম আরিফ , জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, ০৬ জুন ২০২৩

পটুয়াখালীতে গত এক-দুই বছরের মধ্যে নির্মাণ করা অধিকাংশ ব্রিজের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না করায় সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে জেলায় কতগুলো সেতুর এমন দশা তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে। আর ভোগান্তি থেকে মুক্তিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে জেলাবাসী।

গত এক দশকে দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বেশকিছু যুগান্তকারী কাজ করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালী জেলায় বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি ছোট-বড় নদী ও খালে নির্মাণ করা হয়েছে কংক্রিটের সেতু। তবে এসব সেতুর নির্মাণ কাজ অনেক আগে শেষ হলেও বেশকিছু সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।

Patuakhali-1.jpg

অভিযোগ রয়েছে, অনেক সেতুর পুরো বিল তুলে নিলেও ঠিকাদাররা সংযোগ সড়কের কাজ ফেলে রেখেছেন। ফলে সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। এর ফলে এসব এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক চলাচল থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

পটুয়াখালীর আউলিয়াপুর ইউনিয়নেই এলজিইডি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ছয়টি সেতু নির্মাণ করলেও এর একটিতেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এসব সেতু পার হতে স্থানীয়রা কাঠের পাটাতন, বাঁশের মাচা কিংবা কিছু মাটি দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছেন। তবে এই বর্ষা মৌসুমের আগে সেতুগুলোর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না করলে ভোগান্তি বাড়বে কয়েকগুণ।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বলেন, ব্রিজগুলো নির্মাণের খবরে স্থানীয়দের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস ছিল। তবে সাত থেকে আট মাস আগে ব্রিজের কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কাজ এখনো শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ফলে স্থানীয় মানুষ এই ব্রিজের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

Patuakhali-1.jpg

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদার ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে যতটুক আন্তরিকতা দেখায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে তাদের সেই আগ্রহের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। ফলে সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

এমনই একটি সেতু পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ভারানি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের সেতুটির দুইপাশে ১৪০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ২০২০-২১ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে সেতুর কাজ পায় শাহিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের সাব-ঠিকাদার হয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছেন স্থানীয় মো. গিয়াস উদ্দিন নামে এক ঠিকাদার। সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। এক বছর আগেই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজের সংযোগ সড়কের কাজ আর করেনি।

Patuakhali-1.jpg

নির্বাচনের বছর হওয়ায় সরকারের উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে দ্রুত সেতুগুলো ব্যবহার উপযোগী করার দাবি জেলার রাজনৈতিক নেতাদেরও।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, এরইমধ্যে আমাদের কাছেও বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে। আমি সম্প্রতি কলাপাড়া উপজেলার দুর্গম কিছু এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম ব্রিজ আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক নেই। তাৎক্ষণিক আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম এসব ব্রিজের ঠিকাদার কে। তখনই এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন করে বলেছি, এবছর সংসদ নির্বাচনের বছর। দ্রুত ব্রিজগুলোর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করার জন্য আপনার ঠিকাদারদের নির্দেশ দেন।

এছাড়া ঠিকাদারদের বলেছি, তোমরা আওয়ামী লীগ করো, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দাও। ব্রিজের কাজ শেষ করে সরকারের উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।

Patuakhali-1.jpg

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে এক ঠিকাদার বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সেতুর কাজ শেষ করতে গিয়েই আমাদের অনেকটা লোকসানে পড়ার মতো অবস্থা। এর মধ্যে আবার সংযোগ সড়কের কাজ করতে গেলে বাড়তি খরচ হবে। তাই আমরা সংযোগ সড়কের কাজ করতে পারছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহম্মদ লতিফ হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণ করতে জমি নিয়ে কোনো সমস্যা না হলেও সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে যেসব এলাকায় দীর্ঘদিন আগে সেতুর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক করা হয়নি সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চিঠি দিচ্ছি।

এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।