কর্মসংস্থান ব্যাংকের কাজীপুর শাখা

প্রতি লাখ ঋণে ঘুস দিতে হয় ১০ হাজার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ০৭ জুন ২০২৩

কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের কাজীপুর শাখায় ঋণ নিতে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই শাখার সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা তার পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে এ ঘুসের টাকা লেনদেন করেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাজীপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আছাব আলী (৩৬) পেশায় একজন প্রান্তিক কৃষক। তিনি এক লাখ টাকা ঋণের আশায় কর্মসংস্থান ব্যাংক কাজীপুর শাখায় গত তিন মাস আগে কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু এক লাখ টাকা ঋণ পাইয়ে দেবেন বলে ব্যাংকের সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন। এবং ঘুসের টাকা না দিলে ঋণ দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। পরে তিনি এক আত্মীয়ের কাছ থেকে এক সপ্তাহের জন্য সাত হাজার টাকা সংগ্রহ করে সাইদুর রহমান রানাকে দিলে গত মে মাসের শুরুর দিকে এক লাখ টাকা ঋণ পান ওই কৃষক।

ভুক্তভোগী আছাব আলী জাগো নিউজকে বলেন, দুই মাস আমাকে ব্যাংকে ঘুরিয়েছে। কিন্তু ঋণ দেয়নি। যেদিন রানা সাহেবকে ঘুস দিলাম, তার একদিন পরেই আমার ঋণ পাস হয়েছে। তাও আবার ঋণ দেওয়ার সময় সাড়ে ছয় হাজার টাকা কেটে নিছে।

শুধু আছাব আলী নন, এ উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের প্রায় তিনশ গ্রাহক এই ঘুস বাণিজ্যের শিকার। ঘুস দিয়ে ঋণ নিলেও ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাপে তারা মুখ খুলতে চান না। এর ফলে প্রকৃত কৃষক ও নতুন উদ্যোক্তারা বাদ পড়ে যান স্বল্পসুদে সরকারের এই ঋণের বিশেষ সুবিধা থেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনামুখী বাজারের কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অভিযোগ, লাখে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুস ছাড়া ঋণ পাওয়া যায় না। ব্যাংকের সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা এ বাজার এলাকার লাল মিয়া নামে এক সুদি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে লোন পাস করা বাবদ লাখপ্রতি ১০ হাজার টাকা নেন। লাল মিয়ার সঙ্গে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাও সুদের ব্যবসা করেন। তাদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা এলাকার দুই শতাধিক ব্যক্তির কাছে দেওয়া আছে। প্রতি সপ্তাহে পাস বইয়ের মাধ্যমে তারা টাকা উত্তোলন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মসংস্থান ব্যাংকের কাজীপুর শাখার সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা বলেন, অনেকে খুশি হয়ে কিছু দেয়। আমি জোর করি না। আর সোনামুখী এলাকা থেকে নতুন কেউ ঋণ নিতে আসলে আমার পরিচিত লাল মিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিই। কারণ তিনি আমাদের ব্যাংকে দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন করেন। অপরিচিত কাউকে তো আর ঋণ দেওয়া যায় না।

আর লাল মিয়ার বলছেন, ব্যাংকের সহকারী অফিসার রানা আমার সুপরিচিত। তিনি এলাকার সবাইকে চেনেন না। তাই ঋণ নিতে চাইলে আমার কাছে লোকজন পাঠিয়ে দেন। আমি তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে ঋণ পাস করে দিই।

আপনার সুদের কারবার আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু টাকা ব্যবসায়ীদের অল্প সুদে দিই।

কাজীপুর শাখা কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কাউসার আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, কয়দিন আগেও অফিসে এসে সহকারী অফিসার রানার বিরুদ্ধে স্থানীয় একজন ঘুস লেনদেনের বিষয়ে বলেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমার সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানাবো।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার ব্যবস্থাপক খালিদ মোহাম্মদ তোফায়েল আবেদিন জাগো নিউজকে বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণের বিপরীতে কোন ঘুস নেয় না। তবে কাজীপুর শাখায় যদি এমনটা ঘটে তাহলে অবশ্যই আমাদের বগুড়া জোনাল অফিস ব্যবস্থা নেবে।

ব্যাংটির বগুড়া জোনাল অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও) আক্তারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এম এ মালেক/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।