হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চালু

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:৩১ পিএম, ০৯ জুন ২০২৩

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে। গত ১ জুন এই অবতরণ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও উচ্চ আদালতের আদেশে সেটি স্থগিত করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করে পৌর শহরের ওয়েজখালী এলাকায় নবনির্মিত সেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পৌর কিচেন মার্কেটের আড়ৎদারদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ক্ষোভ জানিয়েছেন বাজারের ইজারাদার, মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মে মাসের ১৪ তারিখে জেলা মৎস্য অফিস থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয় আগামী ১ জুন থেকে পৌর শহরের ওয়েজখালীর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মৎস্য ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন বাজারের ইজারাদার আমির হোসেন, খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা। এ কারণে বাজারের ইজারাদার আমির হোসেন উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত জেলা মৎস্য কর্মকর্তার জরুরি বিজ্ঞপ্তির আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। এই স্থগিতাদেশের কারণে সুনামগঞ্জ পৌর কিচেন মার্কেটের আড়ৎতদার ও পাইকারি মৎস্য বাজার স্থানান্তরের সমস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশ অমান্য করে ১ জুন থেকে উদ্বোধন ছাড়াই চলছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। সেখানে জোরপূর্বক বাজারের কিছু আড়ৎদারদের নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরজমিনে সুনামগঞ্জ কিচেন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, গত ১ জুন থেকে সুনামগঞ্জের আড়ৎগুলো মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চলে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা প্রতিদিন সকাল ৭টায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে মাছ কিনে সেই মাছ অটোরিকশায় কিচেন মার্কেটে আনতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। পাশাপাশি বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে অটোরিকশা চালকদের। এমনকি বাজারে আনার আগেই অনেক মাছ মরে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত লোকশান গুনতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে বাজারে ভালো মাছ না থাকায় পুরো বাজার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে।

ফলে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার (৬ জুন) মাছ বিক্রি বন্ধ করে রাস্তায় নেমে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধনে তারা জানান, হাইকোর্টের দেওয়া ৩ মাসের নিষেধ অমান্য করে সুনামগঞ্জের কিচেন মার্কেট থেকে আড়ৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। ওয়েজখালি মৎস্য অতরণ কেন্দ্র থেকে মাছ এনে বিক্রি করতে গেলে দাম হয়ে যায় অধিক। তাই ক্রেতারাও দাম দর করে মাছ না নিয়েই ফেরত যাচ্ছেন। আমাদের একটাই দাবি আগের জায়গায় মৎস্য আড়ৎ অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা না হলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ইজারাদার আমির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছরের এপ্রিলের ১৪ তারিখ থেকে আগামী ১ বছরের জন্য পৌরসভার কাছ থেকে কিচেন মার্কেট প্রায় ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। এখন সেখান থেকে আড়ৎদারেরা চলে গেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই উচ্চ আদালতে রিট করেছি। আদালত রিটের প্রেক্ষিতে ৩ মাসের জন্য মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র উদ্বোধন স্থগিত করেছেন। সেটা প্রশাসনের সবাইকে জানানোর পরও কিভাবে হাইকোর্টের নিষেধ অমাণ্য করে সেখানে আড়ৎ স্থানান্তর করা হলো?

এদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, এমনকি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের যিনি দায়িত্বে আছেন কেউই এটি চালুর বিষয়ে দায় নিতে রাজি নন। তারা বলছেন স্বেচ্ছায় ব্যবসায়ীরা সেখানে গিয়ে মাছ বিক্রি করছেন। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা আদালতের রায় অমান্য করে সেখানে যেতে বাধ্য করেছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামশুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কোনো মৎস্য ব্যবসায়ীকে জোর করিনি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। অনেকেই স্বেচ্ছায় গিয়েছে। যেহেতু হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে এখন তারা পুরাতন স্থানে ব্যবসা করতে পারবেন। আমরা কাউকে কোনো বাধা দিইনি। এখন এটা মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের অধীনে রয়েছে, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারাই এটা ভালো বলতে পারবেন।

সুনামগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবু সাইদ ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ দেওয়ার পর এখানে আমরা সরকারি সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। অনেকে স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, মাছ ব্যবসায়ী যারা গিয়েছেন তারা স্বেচ্ছায় গিয়েছেন। আমরা কাউকে জোর করে নিয়ে আসিনি। হাইকোর্টের নির্দেশের পর আমরা উদ্বোধনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। এখন কেউ যদি মৎস্য অতরণ কেন্দ্রে মাছ বিক্রি করে তাহলে আমরাতো তাকে বাধা দিতে পারি না।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।