৮ রোগীর চিকিৎসা সহায়তার চার লাখ টাকা গেলো কোথায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৩

জটিল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার কথা বলে রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তবে তার মধ্যে আট রোগীর জন্য বরাদ্দ চার লাখ তারা বুঝে পাননি।

এমনকি একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তিন রোগীর টাকা তোলা হয়েছে। সম্প্রতি অডিটে রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের এই অনিয়ম ধরা পড়েছে।

অডিট আপত্তিতে দেখা গেছে, ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, কিডনি, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দরিদ্র রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে দেওয়া আট রোগী তাদের টাকা পাননি। রোগীদের মোবাইল ফোন নম্বর যাচাইকালে বিষয়টি ধরা পড়ে। এছাড়া স্পষ্টভাবে রোগের নাম ও ধরন উল্লেখ না থাকলে আবেদনপত্র বাতিলেরও জোরালো নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু যাচাই কমিটি তা করেনি। ফলে চিকিৎসকের প্রত্যয়ন ছাড়াই এসব রোগীকে টাকা দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তার অধীনে জটিল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়। ওই বছর রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে তার মধ্যে আট রোগী সেই টাকা পাননি।

এর মধ্যে আনিসা বেওয়া এবং আনিছুরা বেগম স্ট্রোকে করে প্যারালাইসিস রোগী। তাদের দুজনকেই সরকারি সহায়তা হিসেবে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এ দুজনের কেউই টাকা পাননি। আনিসা বেওয়ার বাড়ি মতিহার থানার মেহেরচণ্ডী এলাকায় আর আনিছুরার বাড়ি কাটাখালী থানার বুধপাড়া এলাকায়। অসুস্থ এই দুই নারীর চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ এক লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

আনিসা বেওয়ার বোন আফরোজ বেগম বলেন, অনেক দিন আগেই আবেদন করেছিলাম। সাত/আট মাস আগে সমাজসেবা অফিস থেকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু টাকা পাইনি। আমার বোন এখন বিছানায় কষ্টে জীবনযাপন করছে। খুব কষ্ট করেই তার ওষুধ ও চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।

অডিটে আরও উঠে এসেছে, পরাণপুর গ্রামের বাচ্চু, দুর্গাপুর উপজেলার পারিলার শাপলা বেগম ও মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার টিয়ালমকে ক্যানসার আক্রান্ত রোগী হিসেবে প্রত্যেকের বিপরীতে সরকারি বরাদ্দের ৫০ হাজার টাকা করে দেড় লাখ টাকা তোলা হয়েছে। তাদের তিনজনের বাড়ি তিন উপজেলায় হলেও একটিই মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ওই নম্বরে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি।

এভাবে জেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা সিভিল সার্জনের প্রত্যয়ন ছাড়াই ক্যানসার, লিভার সিরোসিস ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত আট রোগীর নামে তোলা হয়েছে চার লাখ টাকা। এখানে নিয়মকানুনের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান বলেন, প্রতিটি অফিসেরই অডিট আপত্তি থাকে। এখানেও অডিট আপত্তি হয়েছে। সেগুলোর জবাব দিতে হবে। তবে এ বিষয়ে জেলার কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন। আমি এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না।

তবে এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজকে একাধিকবার কল করে ও মেসেজ পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সাখাওয়াত হোসেন/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।