বিয়ে করতে বলায় অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে খুন

ময়মনসিংহের ত্রিশালে রাবেয়া বেগম (৪০) নামের এক নারীকে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশ জানিয়েছে, রাবেয়া বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বিষয়টি তার প্রেমিক মো. ইসমাইলকে (৩৮) জানিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দেন। বিয়ে না করলে মামলার হুমকি দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইসমাইল তার সহযোগীদের নিয়ে রাবেয়া বেগমকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন।
গ্রেফতাররা হলেন জেলার ত্রিশাল উপজেলার বাবুপুর গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে মো. ইসমাইল ও একই এলাকার মৃত অয়েজ উদ্দিনের ছেলে মো. আজাহার (৩৮)।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গ্রেফতারদের আদালতে তোলা হলে তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক স্বরণিকা পাল তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক ঝুটন কুমার বর্মণ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন জানান, নিহত রাবেয়া কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার কৈলাগ গ্রামের মৃত মঞ্জু মিয়ার মেয়ে। তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা হয়ে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় বসবাস করে মানুষের বাসায় কাজ করতেন।
পুলিশ জানায়, আনুমানিক সাতমাস আগে গফরগাঁওয়ের একজনের মাধ্যমে ইসমাইলের সঙ্গে পরিচয় হয় রাবেয়ার। পরিচয়ের সূত্রে মোবাইলে কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হতেন।
সম্প্রতি রাবেয়া তাকে বিয়ে করার জন্য ইসমাইলকে চাপ দেন। বিয়ে না করলে ইসমাইলের বিরুদ্ধে থানায় মামলার হুমকি দেন। মামলার ভয়ে ইসমাইল আতঙ্কিত ছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ফোন দিয়ে গফরগাঁও আসতে বলেন। ইসমাইলের কথামতো বাবেয়া টঙ্গী থেকে ট্রেনযোগে গফরগাঁও আসেন।
গফরগাঁও রেলস্টেশনে ইসমাইল, আজাহার ও রফিক রাবেয়ার সঙ্গে দেখা করেন। দেখা করার পর তারা ত্রিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে ধলা বাজারে হোটেলে চারজন খাওয়া-দাওয়া করেন। খাওয়া-দাওয়ার একপর্যায়ে রাবেয়া ইসমাইলকে বলেন, ‘আমার পেটে তোমার বাচ্চা, তুমি আমাকে বিয়ে করো। না হলে আমি তোমার বিরুদ্ধে মামলা করবো’। তখন বাচ্চার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইসমাইল।
পরে রাবেয়াকে বিয়ে করবেন বলে ত্রিশাল চকরামপুর এলাকার উদ্দেশ্যে অটোরিকশাযোগে রওয়ানা দেন তারা। ওইদিন রাত ১০টায় ইসমাইল ও তার সহযোগীরা রাবেয়ার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ বাঁশঝাড়ে রেখে চলে যান।
এ ঘটনার দুদিন পর বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মরদেহ দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ধনু মিয়া বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় মামলা করেন। পরে নিজ বাড়ি থেকে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঞ্জুরুল ইসলাম/এসআর/জেআইএম