বাজারে উঠছে শিম, কেজি ২০০ টাকা

শেখ মহসীন
শেখ মহসীন শেখ মহসীন ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০৯:১৪ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাবনার ঈশ্বরদীর হাট-বাজার ও আড়তে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের শিম। কৃষকরা প্রতি কেজি শিম আড়তে বিক্রি করছেন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে গত বছর শিমের আবাদ হয় ১১৩০ হেক্টর জমিতে। এবার শিমের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১২০০ হেক্টর জমি। এরমধ্যে মুলাডুলি ইউনিয়নেই ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়।

উপজেলা আগাম শিম চাষের গ্রাম খ্যাত বাঘহাছলা ও শেখ পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগাম জাতের শিম গাছে গাছে ঝুলে আছে। কেউ গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত আবার কেউ শিম তোলায় ব্যস্ত।

কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমি থেকে এখন প্রতিদিন ১০-১৫ কেজি করে শিম উঠছে। আর কয়েকদিন পরে এ জমি থেকে প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ করে শিম উঠবে। জ্যৈষ্ঠ থেকে আগাম শিম চাষ শুরু হয়েছে। ভাদ্র মাসের শিম ধরা শুরু করে। এখন বাজারজাত করতে পারছেন চাষিরা।

জানা যায়, এক যুগ ধরে এখানে আগাম শিমের আবাদ চলছে। ফলন ভালো ও কৃষকরা লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে। এ শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পান এখানকার চাষিরা। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল কাঁচামালের আড়ত। এখান থেকে সারাদেশে শিম সরবরাহ করা হয়।

আড়তে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যাগ, ডালা ও বস্তায় ভরে শিম আড়তে আনছেন। আড়তদার ও কৃষকরা দরদাম করে শিম কেনাবেচা করছেন।

মুলাডুলির বাঘহাছলা গ্রামের শিম চাষি ইয়াকুব আলী বলেন, আগাম জাতের অটো শিম চাষ করে এখানকার কৃষকরা বেশ লাভবান হয়। আবহাওয়ার কারণে অন্যবারের তুলনায় এবার শিমের ফলন কিছুটা কম। এখন প্রতিদিন বিঘা প্রতি ১০-১৫ কেজি তুলছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শিমের ফলন আরও বাড়বে।

শেখপাড়া গ্রামের শিম চাষি ইলিয়াস হোসেন বলেন, অসময়ের শিমে যেমন লাভ হয় তেমনি খরচও বেশি। চাষিদের শ্রমও বেশি দিতে হয়। সার-কীটনাশক বেশি দিতে হয়। পরিচর্যায় জন্য শ্রমিক সবসময় জমিতে রাখতেই হয়। অসময়ের শিমের ফলন আবহাওয়ার ওপর বেশি নির্ভর। অতি খরা ও অতিবৃষ্টির কারণে এ শিম ফলন কম হয় এবং ফলন নষ্ট হয়ে যায়। এবার আগাম শিমের ফলন দেরিতে শুরু হয়েছে।

is-(2).jpg

বাঘহাছলা গ্রামের শাম্মী আক্তার বলেন, আগাম শিম আবাদ করে কয়েক বছর ধরে লাভ হচ্ছে। ফলন মোটামুটি শুরু হয়েছে। এখন ১৩০ টাকা কেজি দরে শিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আশাকরি কয়েকদিনের মধ্যেই ফলন আরও বাড়বে।

একই গ্রামের শিম চাষি ওয়াসিম আলী খাঁ বলেন, কীটনাশক ও সারের অতিরিক্ত দামের কারণে আগাম শিমের লাভ অনেক কমে গেছে। ফলন মোটামুটি ভালো। কয়েকদিনের মধ্যে আরও ফলন হবে বলে আশা করছি।

মুলাডুলি আমবাগান কাঁচামাল আড়তের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগাম শিম (অসময়ের) বাজারে ওঠা শুরু হয়েছে। তবে তুলনামূলক এখনো আড়তে কম আসছে। কৃষকরা ডালা, ব্যাগ ও বস্তায় ১৫-২০ কেজি করে আড়তে আনছে। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে আগাম শিমে কাঁচামালের আড়ত সরগরম হয়ে উঠবে আশা করছি। প্রতি কেজি শিম আড়তে বেচাকেনা হচ্ছে ১৫০ টাকায়। তবে কিছু শিমের গুণগত মান খারাপ হওয়ায় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতেও বেচাকেনা হচ্ছে।

কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, অটো-রূপবান-ঘৃত কাঞ্চন-রূপসী নামে আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। এ জাতের শিম জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে আবাদ শুরু হয়। যারা শীত মৌসুমে নিয়মিত শিমের আবাদ করেন তারাও এখন আবাদ করেছেন। গত বছরের চেয়ে এবার উপজেলায় শিমের আবাদ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় আগাম জাতের শিমের চাষ হয়। আমরা জানি শিম শীতকালীন ফসল কিন্তু এখানে আগেই শিমের আবাদ শুরু হয়ে যায়। যেহেতু কৃষক এ শিম আগাম বাজারে আনতে পারে। ফলে তারা এর ভালো বাজারমূল্য পায়। এতে উৎপাদনের ব্যয়ের তুলনায় লাভের পরিমাণ বেশি হয়। এখানকার কৃষকরা আগাম জাতের শিম চাষ করে লাভবান হয়।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।