বন্যা
লক্ষ্মীপুরে কৃষিখাতে ২২৭ কোটি টাকার ক্ষতি
লক্ষ্মীপুরে আকস্মিক বন্যায় এক লাখ ৫৭ হাজার ২০৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বীজতলাসহ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। ৬৫ হাজার কৃষকের জন্য শীতকালীন সবজির প্রণোদনা চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সব কৃষককে প্রণোদনায় আওতায় আনা হবে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি ছিল। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দুই হাজার ৫৩৬ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির বীজতলা। ৭০ ভাগের বেশি বীজতলা নষ্ট হয়ে ৬৩ হাজার ৪২০ জন কৃষকের ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে সাত হাজার ৬১০ দশমিক ৭০ হেক্টর জমির। আবাদ করা জমির ৫৩ ভাগ রোপা আমন নষ্ট হয়ে ৩১ হাজার ৭০৬ জন কৃষকের ৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ২৪ হাজার ৪২৩ জন কৃষকের চার হাজার ৭০ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। বোনা আমনে ৯ হাজার ৭২০ জন কৃষকের এক কোটি দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় ১০ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির শরৎকালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে। আবাদকরা জমির শতভাগ শাক-সবজি নষ্ট হয়ে ২০ হাজার ৭৮০ জন কৃষকের ৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১১২ দশমিক ২ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়ে এক হাজার ৬৬৩ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার। ২৪০ জন কৃষকের ৮৩ দশমিক ৩৩ হেক্টর জমির আদা নষ্ট হয়ে ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ৩৯ হেক্টর জমিতে থাকা ৯৮ মেট্রিক টন হলুদ নষ্ট হয়ে দুই হাজার ৪০ জন কৃষকের এক কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ৭৪৪ জন কৃষকের ৯ দশমিক ৩ হেক্টর জমির আখ নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয় দুই কোটি ৯ লাখ টাকা। দুই হাজার ৭৩ জন ফল চাষির ৪১ দশমিক ৪৬ হেক্টর জমির ফল বাগান নষ্ট হয়ে ২০৭ মেট্রিক টন ফলের ক্ষতি হয়েছে। যার বাজার মূল্য দুই কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, বন্যায় কৃষিখাতে প্রায় ২২৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকের মাঝে পুনর্বাসন প্রণোদনা সরবরাহ করা বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা ছয় হাজার কৃষকের মাঝে আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণ করেছি। তাদের ব্যাংক হিসেবে এক হাজার টাকা করে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ৬৫ হাজার কৃষকের জন্য শীতকালীন সবজির প্রণোদনা চাহিদা পাঠিয়েছি। তারা যাতে বাড়ির আঙ্গিনায় শীতের সবজির চাষাবাদ করতে পারে সে সহযোগিতা করা হবে।
তিনি বলেন, আগাম রবি মৌসুমের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ আমারা বুঝে পেয়েছে। ১৩ হাজার ২০০ শ' কৃষকের মাঝে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, মুগ, মশুর, খেসারি, চিনা বাদাম, সয়াবিন ও শীতকালীন পেয়াজ বীজ বিতরণের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের চারা লাগাতে পারবে। তারা যেন নাভি জাতের বিআর-২২, বিআর-২৩ ধানের চারা রোপণ করে। আমরা দেওয়া বিআর-৭৫, বিআর-১৭, এ দুটা বীজ দ্রুত কাদাযুক্ত মাটিতে বপন করে ১৫ দিনের মধ্যে চারা জমিতে রোপণ করতে পারবে। এ ধান নির্দিষ্ট সময়ে ভাল ফলন দিতে পারে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা আমাদের দিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পুনর্বাসনের জন্য যে অর্থ পাবো সেটি যথাযথভাবে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কাজল কায়েস/আরএইচ/জেআইএম