রেহমান সোবহান

রপ্তানি বহুমুখীকরণে অভ্যন্তরীণ বাজারে মনোযোগ দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সিপিডি আয়োজিত কনফারেন্সে বক্তারা

রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে উপেক্ষা করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন, আপনি যদি চীনের মতো দেশগুলো দেখেন, চীন মূলত তার শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল কারণ তাদের বিলিয়ন ডলারের একটি অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল। চীনে আসা এফডিআইয়ের প্রধান প্রাথমিক আকর্ষণ ছিল চীনা বাজারে প্রবেশ করা।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে সিপিডি আয়োজিত কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দুই দিনব্যাপী কনফারেন্সের প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতির পুনঃকৌশলীকরণের টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ড. কেএএস মুর্শিদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাস্ক ফোর্সের সদস্য সেলিম রায়হান এবং ড. মোহাম্মদ এ রাজ্জাক।

সেমিনারে রেহমান সোবহান বলেন, অটোমোবাইল নির্মাতাদের সবাই চীনে এসেছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীনকে অটোমোবাইলের বৃহত্তম প্রস্তুতকারক বানিয়েছিল। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজার এর প্রধান আকর্ষণ ছিল। ইলেকট্রনিক গাড়ির ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, সর্বোপরি, আপনার যদি ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ থাকে এবং এই অভ্যন্তরীণ বাজার প্রতি বছর ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, এটি অবশ্যই একটি খুব আকর্ষণীয় বাজার। যারা বাংলাদেশে এফডিআই নিয়ে এসেছে তারাও সেই বাজারকে লক্ষ্য করে এসেছে। তাই এই বাজার পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কি না, কোন গুণগত উন্নতি করা যেতে পারে কি না এ বিষয়ে ভাবতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পরিপক্ব হওয়ার পর সেগুলো রপ্তানিতে পাঠানো যেতে পারে। যেমন: বাইসাইকেল, ইলেকট্রনিক এবং এ ধরনের পণ্যসহ এমন অনেক শিল্প রয়েছে যা পরিপক্বতা অর্জন করেছে এবং রপ্তানিতে পরিপক্বতা পাচ্ছে।

সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে গত ৩০ বছরে যে বিষয়গুলো বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, এখনো তার সমাধান হয়নি। যতক্ষণ না আপনি সঠিকভাবে এটি নির্ণয় করতে পারবেন, ততক্ষণ আপনি ভবিষ্যতের জন্য সত্যিকারের নীতি সংস্কারের পরামর্শ দিতে পারবেন না। তাই এটি একটি বড় অমীমাংসিত সমস্যা। একাডেমিক গবেষণা এবং সরকারি নীতি প্রণয়ন উভয় স্তরেই প্রয়োজন।

‘উদাহরণস্বরূপ, চামড়া শিল্পের সমস্যা, আরএমজির বহুমুখীকরণ এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সম্পর্কিত সমস্যা। এই সমস্যাগুলো শুধু সাধারণভাবে আলোচিত হয়নি, বিশেষ টাস্ক ফোর্স গভীরভাবে এই সমস্যাগুলোর ওপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে কাজ করেছে।’ যোগ করেন তিনি বলেন।

রেহমান সোবহান বলেন, তাই রপ্তানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে ফোকাস কারা উচিত। একদা আমাদের শুধু একটি সরকারি ইস্পাত কারখানা ছিল, চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা, যা ১ লাখ টন খুব মৌলিক ইস্পাত সামগ্রী উৎপাদন করতো। এখন বিএসআরএমের মতো যেকোনো বড় কারখানা ১ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন করবে এবং তারা আরও বৈচিত্র্যময় এবং অত্যাধুনিক পণ্য উৎপাদন করবে।

সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, আমি খুশি যে টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদনে মাঝারি এবং ক্ষুদ্র পরিসরের এমএসএমইগুলো কীভাবে তাদের পণ্যের মান উন্নয়ন করতে পারে, রপ্তানি খাতের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে এবং সাপ্লাই চেইনে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরির মাধ্যমে পণ্যগুলোর উৎপাদনশীলতা এবং গুণমান যোগ করতে পারে- এ সংক্রান্ত সুপারিশ আছে।

তিনি আরও বলেন, আমি বলবো যে আমরা সবাই দীর্ঘকাল ধরে এফডিআই নিয়ে কথা বলি এবং আমরা সত্যিই এফডিআই আকর্ষণ করতে সক্ষম হইনি। বাংলাদেশে থাকা এফডিআই বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিবিড় কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের সমস্যা শুনে তা সমাধানে অগ্রসর হওয়া উচিত।

এসআরএস/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।