‘মৌসুম শেষের’ অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:২৩ এএম, ১২ আগস্ট ২০২৫

• মোকাম সিন্ডিকেটে বন্দি পেঁয়াজের বাজার
• খাতুনগঞ্জে হু হু করে বাড়ছে দাম
• ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা
• আমদানির অনুমতি দিলে দাম অর্ধেকে নামবে, দাবি আড়তদারদের

দেশে ভালো ফলন হওয়ায় চলতি মৌসুমে আমদানি করতে হয়নি পেঁয়াজ। দামও ছিল মোটামুটি হাতের নাগালে। গত ১৫ দিনে হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম বাড়ায় ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফলন বেশি হয় এমন জেলাগুলোর মোকাম থেকে সরবরাহ করে সারাদেশের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। এতে মৌসুম শেষের অজুহাতে মোকামগুলোতে পেঁয়াজ কমে আসার সুযোগে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্র।

মৌসুম শেষের দিকে হলেও মোকামে এখনো পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। মূলত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতেও পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে থাকতে পারে।- খাতুনগঞ্জের মেসার্স জামেনা ট্রেডিংয়ের পরিচালক মো. আজগর হোসেন

ভোগ্যপণ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে আকারভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা করে বেড়েছে। খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ীদের দাবি, মৌসুম শেষে পেঁয়াজ কমে আসায় মোকাম মালিকরাই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন।

‘মৌসুম শেষের’ অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের সোমবারের (১১ আগস্ট) প্রতিবেদনে বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ১ আগস্ট খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা। টিসিবির প্রতিবেদন বলছে, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।

সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭২ টাকা থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে রাজবাড়ি, পাবনা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ার মোকাম থেকে সারাদেশে পেঁয়াজ যাচ্ছে। খাতুনগঞ্জেও আসছে।

মোকামগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মোকামগুলোতে দাম বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে পাইকারি ও খুচরায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এখন আইপি (আমদানি অনুমতি) দিলে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। বিশেষ করে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম ৫০ টাকার মধ্যে চলে আসবে।- মধ্যম চাক্তাইয়ের মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজার তাহসিনুল করিম

হামিদউল্লাহ মিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব বলেন, ‘গত ১৫-২০ দিন ধরে পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে। বিশেষ করে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে টানা। বৈরী আবহাওয়ার কারণ দেখিয়ে মোকামগুলো থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে সরবরাহ। এ সুযোগে দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।’

দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর দেশি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রিত হতো। খাতুনগঞ্জের মেসার্স জামেনা ট্রেডিংয়ের পরিচালক মো. আজগর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার তো দেশি পেঁয়াজে সারা বছর যাচ্ছে। মৌসুম শেষের দিকে হলেও মোকামে এখন পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। মূলত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতেও পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে থাকতে পারে। তবে দাম বাড়ার কারণে ভোক্তাপর্যায়ে পেঁয়াজের ব্যবহার কিছুটা কমবে। এতে দাম নিয়ন্ত্রিত থাকার কথা। তবু দাম কিছু বাড়লেও দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। এতে সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী হবেন দেশের কৃষক। তখন অতিরিক্ত দাম নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।’

আগে আমাদের পেঁয়াজের বাজার ভারতনির্ভর ছিল। গত দু-এক বছরে ভারতনির্ভরতা কাটিয়ে আমাদের দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এটি সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক বিষয়।- খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস

এদিকে গত বছরের এই সময়ে দেশে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি ছিল। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড ও মিশর থেকে দেশে পেঁয়াজ আসা শুরু করলে খাতুনগঞ্জের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসে।

মধ্যম চাক্তাইয়ের মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজার তাহসিনুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে দেশি রাজবাড়ির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকায়। এর আগের সপ্তাহে ছিল প্রতি কেজি ৫৯ টাকা। এখন বাজারে সরবরাহ কমে আসার সুযোগ নিচ্ছে মোকামগুলো।’

‘মৌসুম শেষের’ অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

তিনি বলেন, ‘মোকামগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মোকামগুলোতে দাম বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে পাইকারি ও খুচরায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এখন আইপি (আমদানি অনুমতি) দিলে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। বিশেষ করে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম ৫০ টাকার মধ্যে চলে আসবে।’

খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে আমাদের পেঁয়াজের বাজার ভারতনির্ভর ছিল। গত দু-এক বছরে ভারতনির্ভরতা কাটিয়ে আমাদের দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এটি সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি ছিল। মূলত এখন মৌসুম শেষ পর্যায়ে। মোকামে মজুত কিছু কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে, পচন ধরছে। যে কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। এতে দাম কিছুটা বাড়ছে। সম্প্রতি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও মোকামে যে পেঁয়াজ রয়েছে, তা দিয়ে নতুন মৌসুম পর্যন্ত দেশের চাহিদা মেটানো যাবে আশা করছি।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।