চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয় বেড়েছে

ইব্রাহীম হুসাইন অভি
ইব্রাহীম হুসাইন অভি ইব্রাহীম হুসাইন অভি
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও চলতি ২০২৫‑২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের রপ্তানি আয় পৌঁছেছে ১২.৩১ বিলিয়ন ডলারে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৬৫ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় ছিলো ১১.৬৫ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট, সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্ন ও মুদ্রাস্ফীতি প্রবণতা—এসব কারণে ২০২২ ও ২০২৩ অর্থবছরে রপ্তানি কমেছিলো। এরপর ২০২৪ অর্থবছর থেকে রপ্তানি ধাপে ধাপে পুনরুদ্ধার পায়। যা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরে আরও দৃঢ় হয়েছে।

নিয়মিত পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, বিদেশি বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকখাতে। রপ্তানির এই পুনরুদ্ধারে অবদান রাখছে উন্নত বাণিজ্য লজিস্টিকস, নীতি সহযোগিতা ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ। বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে যেতে পারে বা তা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে। যা বিশ্ববাণিজ্যে দেশের অবস্থান আরও শক্ত করবে।

কেন সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি কমেছে?

সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় ৪.৬১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৬২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের একই মাসে ৩.৮০ বিলিয়ন ডলার ছিলো। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তৈরি পোশাকখাত আয় করেছে ৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৭৯ শতাংশ বেশি।

নিটওয়্যার রপ্তানি আয় ৪.৩১ শতাংশ বেড়ে ৫.৫৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে গত বছর একই সময় ছিলো ৫.৩৫ বিলিয়ন। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই সেক্টর এককভাবে অর্জন করেছে ২.৮৪ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৩.০১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫.৬৬ শতাংশ কম।

এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি ৫.৬৬ শতাংশ কমেছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক প্রভাবের কারণে। যা দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়েও বিরূপ প্রতিফলন ফেলেছে।- মোহাম্মদ হাতেম, সভাপতি, বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি ৫.৬৬ শতাংশ কমেছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক প্রভাবের কারণে। যা দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়েও বিরূপ প্রতিফলন ফেলেছে।

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, যেখানে বেশিরভাগ ক্রেতা নতুন অর্ডার দিতে নিষ্ক্রিয়, অনেকেই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কের কিছু অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। এই অতিরিক্ত বোঝা বহন করা রপ্তানিকারকদের পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ তারা ইতিমধ্যে প্রারম্ভিক শুল্কের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্রমাগত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয় বেড়েছে

বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অন্যান্য বাজারে প্রতিযোগিতায় প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ চীনা ও ভারতীয় নির্মাতারা যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতি মোকাবিলার জন্য তাদের রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এই মন্দা আগামী দুই থেকে তিন মাস ধরে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেন হাতেম। তবে, নতুন শুল্ক ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা মানিয়ে নিলে রপ্তানি পুনরুদ্ধার পাবে বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন
বাধা পেরিয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে, প্রত্যাশা ছুঁতে পারেনি প্রবৃদ্ধি
সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ৪.৬১ শতাংশ
আগস্টে রপ্তানি আয়ে ধীরগতি

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান জাগো নিউজকে বলেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই সময়ে অর্ডারের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কজনিত কারণে চাহিদাও কমে গেছে। তবে নভেম্বর–ডিসেম্বর থেকে এই মন্দাভাব কিছুটা কাটিয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ইনামুল হক খান আরও বলেন, অতিরিক্ত শুল্কের বোঝার চাপ বড় রপ্তানিকারকরা এড়িয়ে যেতে পারলেও ছোট ও মধ্যম মানের প্রস্তুতকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টেও রপ্তানিতে ধীর গতি ছিলো। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসে শিপমেন্ট বেড়ে গিয়েছিলো। সেই উন্নতি সম্ভবতই এই বছরের সেপ্টেম্বরের আয় হ্রাসের একটা কারণ হতে পারে। তবে সার্বিকভাবে শিল্পের অবস্থা চ্যালেঞ্জিং। তবু আমরা আশাবাদী যে, আসন্ন মাসগুলোতে রপ্তানি আবার বৃদ্ধির পথে ফিরবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গত দুই মাসে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখেছি, যা মোটেও ভালো সংকেত নয়। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশ সমগ্র রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করতে পারে। রপ্তানি হ্রাসের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

প্রধান খাতগুলোর রপ্তানি আয়

জুলাই-সেপ্টেম্বরে হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি আয় ৭.৯৮ শতাংশ বেড়ে ২০৬.৬২ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত বছর একই সময়ে এই আয়ের পরিমাণ ছিলো ১৯১.৩৫ মিলিয়ন ডলার।

কৃষিখাতের রপ্তানি আয় ১.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭৬.৫৭ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিলো ২৭২.৩৮ মিলিয়ন।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় ১০.৬ শতাংশ বেড়ে ৩১৯.৭৪ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগের বছর একই সময়ে ছিলো ২৮৯.০৯ মিলিয়ন।

প্রধান রপ্তানি খাতগুলোর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ খাতে রপ্তানি আয় ৪৫.১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৫.৩৭ মিলিয়ন ডলারে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১৩.৯২ মিলিয়ন ডলার বেশি।

পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ৩.৭৩ শতাংশ বেড়ে ১৯২.৮৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে এ খাত থেকে আয় হয়েছিলো ১৮৫.৯৬ মিলিয়ন ডলার।

আইএইচও/এমএমকে/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।