বাণিজ্য উপদেষ্টা

তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে উদ্ভাবন প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৭ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্টের গ্র্যান্ড ফিনালেতে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা/ছবি: সংগৃহীত

দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে উদ্ভাবন বা ইনোভেশন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা পাঠ্যক্রম, একাডেমিক জ্ঞান এবং শিল্প খাতের চাহিদার মধ্যে একটি ব্যবধান রয়েছে। ফলে আমাদের স্নাতকরা প্রায়ই শিল্পের বাস্তব চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হন। তাই আমাদের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল (বস্ত্র) খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ইনোভেশন এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে মেন্টরশিপ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।’

বুধবার (১২ নভেম্বর) টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্ট সিজন ৯-এর গ্র্যান্ড ফিনালেতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। টেক্সটাইল টুডে ইনোভেশন হাব আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত প্রতিযোগীরা বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা এবং সমাধান উপস্থাপন করেন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘দেশের টেক্সটাইল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণব্যবস্থাকে আরও কার্যকরভাবে উৎপাদনমুখী করতে হবে। অনেক টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে আধুনিক ও দামি যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার হচ্ছে না, কারণ শিল্প ও শিক্ষার মধ্যে সংযোগের অভাব রয়েছে। যদি শিক্ষার্থীরা কারখানার মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাস্তব কাজের চুক্তিতে যুক্ত হতে পারেন, তাহলে সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভাব।’

উদ্ভাবনকে পদ্ধতিগতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ও উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে মেন্টরশিপ বা দিকনির্দেশনা সংস্কৃতির ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘প্রত্যেকেরই একজন মেন্টর দরকার। যারা পেশাগত জীবনে সফল হয়েছেন তাদের উচিত তরুণদের সঠিক পথে অনুপ্রাণিত ও গাইড করা। শুধু শ্রম-খরচ কমানো নয়, বরং ইনোভেশন ও দক্ষ বিনিয়োগই বাংলাদেশের শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করবে। শ্রম-খরচ কমিয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি আসবে না। আমাদের ইনোভেট ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে এবং যারা প্রকৃত অর্থে মূল্য তৈরি করছে তাদের সম্মান ও প্রণোদনা দিতে হবে।’

বস্ত্র খাতকে জাতীয় সমৃদ্ধির বাহন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, বস্ত্রশিল্পের ইতিহাস গভীর। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছিল বস্ত্র থেকেই। বাংলাদেশও এর মাধ্যমে উচ্চমানের মূল্য সংযোজন অর্জন করে দেশের অর্থনীতি পরিবর্তন করতে সক্ষম।

শিল্পে কালো টাকা বিনিয়োগের দাবির বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘সরকার আইন করে কালো টাকা সাদা করা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমান সরকার কালো বা অবৈধ আয়কে বৈধ করা যাবে না- এই নীতির ওপর দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনীতিকে টেকসই করতে চায়। যদি আমরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ তৈরি করতে পারি, তাহলে কালো টাকা সাদা করার কোনো পথ থাকবে না।’

আরও পড়ুন
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উৎরাতে সক্ষম হয়েছে সরকার
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমছে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি: অর্থ উপদেষ্টা
ঢাকায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যমেলা ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর

উপদেষ্টা জানান, সরকার দেশে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দুর্বৃত্তায়ন থেকে উত্তরণে সামগ্রিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগে যে পরিস্থিতি ছিল- রিজার্ভ সংকট, ব্যাংকের অপ্রদর্শিত দায়, সেগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে কঠোর নীতিমালা পরিচালনা করছে। উত্তরণের ফলে আজ রিজার্ভ বেড়েছে এবং অর্থনৈতিক স্থিতি কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে।

গ্যাস সরবরাহে সংকট অনেকাংশে কমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে এনার্জি কম্পোজিশন বা শক্তির ব্যবস্থাপনাকে কেবল পরিবেশগত নয়, আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখার।

টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্ট
এ বছর প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেন। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করা ১০০ জন জাতীয় পর্যায়ে ইনোভেশন মাস্টারমাইন্ড হিসেবে প্রশিক্ষণ, গ্রুমিং ও গবেষণা প্রকল্পে কাজের সুযোগ পান। এর মধ্য থেকে শীর্ষ সাতটি উদ্ভাবনী প্রকল্পকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়।

শীর্ষ প্রকল্পগুলো হলো-
১০০ শতাংশ কটন সিঙ্গেল জার্সি ফ্যাব্রিকে স্টিম খরচ হ্রাস।
১০০ শতাংশ কটন নিটেড ফ্যাব্রিক ডাইংয়ে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস।
১০০ শতাংশ কটন ডাইংয়ে পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
ইন্টেলিজেন্ট ইয়ার্ন ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্টের জন্য ক্লাউড ইন্টিগ্রেটেড লিন সিস্টেম।
পানি, সময় ও রাসায়নিক ব্যবহারে সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ডাইং প্রক্রিয়ার পুনঃনকশা।
হালকা শেডের ১০০ শতাংশ কটন নিট ফ্যাব্রিক ডাইংয়ে আরএফটি উন্নয়ন।
রিং ও রোটর ইয়ার্নের জন্য দুটি ভিন্ন প্রযুক্তিতে প্রি-কনজিউমার বর্জ্য পুনর্ব্যবহার।

বিচারকদের প্যানেল নির্ধারিত এই সাত প্রকল্পের চূড়ান্ত গ্রুপ উপস্থাপনার পর বিজয়ীদের হাতে ট্রফি এবং পুরস্কারের চেক হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে স্টিম খরচ হ্রাস প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেড় লাখ, ডাইংয়ে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে এক লাখ ও ডাইংয়ে পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৭৫ হাজার টাকা জিতেছে।

আইএমদের মধ্যে বুটেক্সের বায়েজিদ আহমেদ চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন্স হিসেবে ট্রফি ও এক লাখ টাকা পুরস্কার, বুটেক্সের মো. আব্দুল ওহাব শামস প্রথম রানার আপ হিসেবে ৪৫ হাজার টাকা ও নিটারের মো. ইমতিয়াস ইমাম দ্বিতীয় রানার আপ হিসেবে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন টেক্সটাইল টুডে ইনোভেশন হাবের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং আইটিইটির আহ্বায়ক এহসানুল করিম কায়সার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিবিএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আইয়ুব নবী খান ও আইটিইটির সদস্যসচিব মো. এনায়েত হোসেন।

একিউএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।