স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে পোশাক কারখানায় ভাংচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ২০ মে ২০২০

কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পখাত বিপর্যস্ত। ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। এমনকি অনেক ক্রেতা দেউলিয়াও হয়ে যাচ্ছেন। ঠিক এরকম একটি স্পর্শকাতর সময়ে শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদেরকে ব্যবহার করে শিল্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরাও রয়েছেন, যারা প্রকৃত শ্রমিক নন বলে দাবি করেছেন পোশাক মালিকরা।

বুধবার (২০ মে) পোশাক মালিকদের বড় দু‌টি সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে‌ছে।

সংগঠন দু‌টি বলছে, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গত ক’দিন ধরে বেতন-ভাতার আন্দোলনের নামে যেভাবে পোশাক কারখানা ভাংচুর করা হচ্ছে, তাতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে গভীর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক সমস্যা কোভিড-১৯ এর প্রভাবে যখন সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নড়ে গেছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প খাতেও। ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। এমনকি অনেক ক্রেতা দেউলিয়াও হয়ে যাচ্ছেন। ঠিক এরকম একটি স্পর্শকাতর সময়ে শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদেরকে ব্যবহার করে শিল্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যা মোটেও কাম্য নয়।

তারা বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরাও রয়েছেন, যারা প্রকৃত শ্রমিক নন। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে ছোট ও মাঝারি কারখানার পাশাপাশি বড় বড় কমপ্লায়েন্ট পোশাক কারখানা, যাদের কর্মপরিবেশ ভালো, বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয়, সেগুলোও আন্দোলনের নামে ভাংচুর করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে বলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এই নৈরাজ্যজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এবং এই অরাজকতা রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সংগঠন দুটি।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে, বর্তমান সংকটময় মূহূর্তে বেতন-বোনাস ইস্যুতে কারখানা ভাংচুর করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রি-পক্ষীয় সিদ্ধান্তের আলোকে কারখানাগুলো সংকটের মধ্যে থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। কিছু কিছু কারখানায় অবশ্য ব্যতয় ঘটছে। কারণ এই কারখানাগুলোর অনেকেরই হাতে এখন কোনো কাজ নেই। তারপরও কারখানাগুলো এ বিষয়ে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো ত্রি-পক্ষীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধ করা সত্ত্বেও অনেক কারখানা ভাংচুরের সম্মুক্ষীন হচ্ছে, যা শিল্পের জন্য একটি অশনি সংকেত। এটি ভবিষ্যতে উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নিরুৎসাহিত করবে বলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে।

প্রসঙ্গত করোনা পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান রফতানি খাত পোশাক শিল্পসহ রফতানি খাতের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহজ শর্তে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও অনেক উদ্যোক্তা আবেদন করেও এ ঋণ পাননি। ঋণ আবেদনের জন্য গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএ এর সনদ নিয়েছে ১ হাজার ৩৭৭টি কারখানা এবং বিকেএমইএ এর কাছ থেকে সনদ নিয়েছে ৫১৯টি কারখানা।

পোশাক খাতের এ দুই দুই সংগঠন মনে করে, শিল্প ও শ্রমিক একে অপরের পরিপূরক। শিল্প ভালো থাকলে শ্রমিক ভালো থাকবে। শ্রমিক তার জীবিকার উৎস ধ্বংস হতে দিবে না, এটাই কাম্য। মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিবিএল, ওপেক্স, মেডলার, ইমপ্রেস, ভিশন, ডিজাইনটেক্স, সেনটেক্স, সিভিক এপারেলস লি. ও ফকির নিটওয়্যারসহ অনেক পোশাক কারখানা ভাংচুর করা হয়েছে। বেলিসিমা ও সিভিক এপারেলস লি. এর মালিকদেরকে সরাসরিভাবে অপদস্থও করা হয়েছে, যা একান্তভাবে অনভিপ্রেত। এসব আইন বহির্ভূত ঘটনায় বহিরাগতদেরও উস্কানি রয়েছে।

তারা বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, উপরোক্ত ঘটনাগুলোর উপযুক্ত ছবি, তথ্য ও পর্যাপ্ত প্রমাণ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এর হাতে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি চলমান থাকলে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি ও ভাংচুরের কারণে কারখানা ও ব্যবসা বন্ধ হলে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, বিশেষ করে লাখো লাখো শ্রমিক ভাইবোন কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

এতে সার্বিকভাবে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়বে, সেই সঙ্গে সামাজিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হবে। যা মোকাবিলা করা জাতির পক্ষে অত্যন্ত দুরূহ। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় লিপ্ত দুষ্কৃতিকারীদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ ও জোর দাবি জানায়। পাশাপাশি এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকেও জোরালো পদক্ষেপ একান্তভাবে আশা করছে মালিকরা।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে, কোনো কারণে তৈরি পোশাকখাত ধ্বংস হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। কারণ তারা কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব, এমন কোনো খাত এখনও গড়ে উঠেনি। তৈরি পোশাক শিল্পখাতে স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে সবার সহযোগিতা চেয়েছে সংগঠন দুটি।

এসআই/এমএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।