‘পণ্য ডেলিভারি না হলে ক্রেতারা দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে’
ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশে চলমান বিধিনিষেধ আটদিনের জন্য শিথিল করা হয়েছে। শিথিলতা শেষে আরও ১৪ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
আগামী ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত চলা বিধিনিষেধের সময় শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে বন্ধ থাকবে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসও।
বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা বন্ধ হলে এসব খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের রফতানিমুখী শিল্প; বিশেষ করে পোশাক খাত।
দেশে এমন অবস্থা বিরাজ করলে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন, তারা লকডাউন নেই এমন দেশে চলে যাবেন। অবস্থা বিবেচনায় আগামী ১৪ দিনের বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখার পরামর্শ নিটওয়ার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ)।
সার্বিক বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি এবং ফতুল্লা অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলে এহসান শামীম।
বিকেএমইএ-এর সহ-সভাপতি ফজলে এহসান শামীম
ফজলে এহসান শামীম বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা বিভিন্ন সমস্যায় আছি। বিশেষ করে এসময়ে অর্ডার বাতিলসহ এ খাতকে অনেক সংকটে পড়তে হয়েছে। এখন সংকট কাটিয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে আসছে, বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার আসছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিটি কারখানায়ই কাজের চাপ আছে। এ অবস্থায় এ শিল্পকে যদি বিধিনিষেধের বাইরে না রাখা হয়, তাহলে কঠিন সংকটে পড়তে হবে। বিদেশি বায়াররা আমাদের দেশ থেকে আস্থা হারাবে। তারা নতুন একটি দেশ খুঁজবে, যেখানে কোনো লকডাউন নেই।’
সরকারের কাছে কী আশা করছেন প্রশ্নে ফজলে এহসান শামীম বলেন, ‘আমরা মনে করি, রফতানিমুখী শিল্পকে বিধিনিষেধের বাইরে রাখাই ভালো। শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শ্রমিকরা একসঙ্গে বাইরে চলে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কারখানাগুলোতে একে একে ছুটি দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু তাদের (শ্রমিক) বাড়ি যাওয়া কী আটকাতে পারবেন? এটা সম্ভব হবে না। আবার ৫ আগস্টের পর যখন কারখানা খুলবে, গ্রাম থেকে সবাই একসঙ্গে আসার চেষ্টা করবে। এতে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।’
‘সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে প্রতিটি সেক্টরকে একে একে খুলে দেয়ার জন্য। প্রথমে রফতানিমুখী বা শিল্পখাত, পরে ব্যাংক-বীমা বা অন্য প্রতিষ্ঠান। এতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে’ যোগ করেন তিনি।
বিকেএমইএ’র এ সহ-সভাপতি বলেন, ‘এখনো অনেক দেশ আছে, যেখানে লকডাউনও আছে আবার শিল্প কারখানায় উৎপাদনও আছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশেও এমনটা হয়ে আসছিল।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৩ জুলাই থেকে ১৪ দিন বন্ধ হলে কারখানা মালিকরা অর্থ সংকটে পড়বেন। কারণ যেখানে উৎপাদন হবে না, সেখানে কারখানায় বায়ারদের মাল (পণ্য) কোথা থেকে দেবে কারখানা, টাকা দেবে কে? এতে বায়াররা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’
ফজলে এহসান শামীম আরও বলেন, ‘এখন ক্রয়াদেশ পাচ্ছি, অর্ডার জমে আছে। শিপমেন্ট প্রসেস হচ্ছে, ডেলিভারির সময় এসে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কারখানা বন্ধ হলে সব ভেস্তে যাবে। এজন্য শিল্প কারখানাকে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধের ক্ষেত্রে ২৩টি শর্ত দেয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এতে বলা হয়, সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসও। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট এবং পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। এই বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও সাতদিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল। সর্বশেষ জারি করা প্রজ্ঞাপনে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার।
ইএআর/এএএইচ/এমএস