পোষা প্রাণীর খাবারের দাম আকাশচুম্বী, বাড়ছে সংকট

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২
প্রত্যেকটি খাবারের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত-ছবি জাগো নিউজ

হোক কবুতর, বিড়াল-কুকুর কিংবা খরগোশ- বাড়িতে রাখা এসব পোষা প্রাণী ছোটবড় সবারই বন্ধু। পোষা এসব প্রাণী সবসময় নিজের সঙ্গে রাখেন, যত্ন আত্তিতে কোনো ত্রুটি রাখেন না, এমন মানুষও প্রচুর। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেকেই এসব প্রাণীর মুখে তুলে দেন প্রক্রিয়াজাত খাবার বা পেট ফুড। সিরিয়াল, মাছ, মুরগি ও গরুর মাংসে তৈরি এসব খাবার আসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেট ফুডের বাজার করোনার আগেও তেমন জমজমাট ছিল না। মহামারির সময় জনপ্রিয়তা পায় এ ধরনের খাদ্য। পেডিগ্রি, লরা, উইসকাস, রেফ্লেক্স, মিকো, মিটো, প্রো ডায়েট ব্র্যান্ডের এসব খাবার সুপার শপ, কাঁটাবন অভিজাত এলাকা ছাপিয়ে এখন মিলছে অনলাইন ও পাড়া-মহল্লার দোকানেও। বছরে শতকোটি টাকা লেনদেন হয় পোষা প্রাণীদের খাবার আমদানিতে।

ইউরোপের যুদ্ধে সৃষ্ট ডলার সংকটের কারণে বিদেশ থেকে পেট ফুড আমদানিতে বেগ পেতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। বিগত তিন মাস ধরে পেট ফুড আমদানিতে ব্যাংকগুলো থেকে এলসি বা ঋণপত্র খুলতে পারছেন আমদানিকারকরা। তাতেই তেতে উঠেছে বাজার, অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রত্যেকটি খাবারের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত, ধীরে ধীরে শেষ হচ্ছে মজুত।

আরও পড়ুন: ঢাকায় পোষা প্রাণীর আবাসিক হোটেল ‘ফারিঘর’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলো আশ্বস্ত করছে কেবল, এলসি না খুলতে পারলে আগামী বছর পোষ্য প্রাণীর খাবার নিয়ে দেখা দেবে অরাজকতা।

Pet-4.jpg

পোষা প্রাণীর খাবার, খাঁচা, খেলনা ও প্রয়োজনীয় সব পণ্যই পাওয়া যায় রাজধানীর কাঁটাবনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটে। তবে পোষা প্রাণীর খাবার নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রাহী বেশিরভাগ ব্যবসায়ী।

ক্রেতারা জানান, নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ইচ্ছামতো নেওয়া হচ্ছে খাবার ও অন্যান্য জিনিসের দাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ফরিদা আক্তার মৌ তার তিন মাস বয়সী বিড়াল ছানার জন্য লরা ব্র্যান্ডের পেট ফুড (বিড়ালের খাবার) খুঁজতে কাঁটাবনের বিভিন্ন দোকান ঘুরেছেন। তবে পছন্দের ব্র্যান্ডের খাবার পাননি।

তিনি বলেন, বাজারে সস্তা নিম্নমানের পেট ফুডও আছে। সেগুলোর দামও বেশি। ইউরোপ, তুর্কিশ ব্র্যান্ডের যেসব খাবার আছে সেগুলোর দাম আকাশচুম্বি চাওয়া হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ২০-৩০ টাকা বাড়ছে। কিছু খাবার বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। বিড়ালের মুরগির মাংসের আড়াইশ গ্রামের একটা খাবার সপ্তাহের ব্যবধানে ৬০ টাকাও বেড়েছে, এমনটাও দেখেছি।

আরও পড়ুন: কাটাবন মার্কেটের মাছ-পশু-পাখির জীবন রক্ষার উদ্যোগ

কাঁটাবনে দি বার্ডস বিতানের স্বত্বাধিকারী বরুণ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ডলারের দামে যেহেতু বেড়েছে, এ ধরনের পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। আর আমরা দাম বাড়িয়ে নেব কেন? যে ক্রেতা আগে ৪ হাজার টাকার খাবার নিতো সে এখন ২ হাজার টাকার খাবার নেয়। বেঁচাকেনা কমেছে, আমরা যেভাবে পারছি দিয়ে দিচ্ছি। এগুলো তো মজুত করে রাখার জিনিস নয়।

তিনি বলেন, নতুন করে কোনো পণ্য পাই না। কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা। যারা আমদানি করে তারা পণ্য দিতে পারে না। পর্যাপ্ত পণ্য আছে, এখন কোনো সমস্যা হবে না।

ফেসবুক পেজ পেট হ্যাভেন শপ বিডির ব্যবসায়ী খালিদ রহমান বলেন, খাবারগুলো সবই বিদেশ থেকে আসে। এলসি বন্ধের কারণে পণ্য আসা বন্ধ হয়ে গেছে, পণ্যের মজুত ধীরে ধীরে কমছে। আগে যাদের এলসি করা ছিল তাদের পণ্যই আসছে। তিন মাস ধরে নতুন এলসি খোলা বন্ধ। নতুন করে পণ্য আসা বন্ধ। যে পণ্যগুলো আসছে ডলারের রেট বেশি হওয়ায়, সেগুলোর দামও বেশি।

Pet-4.jpg

করোনাকালে ব্যবসা শুরু করা এই ব্যবসায়ী বলেন, খাবারের এখন অনেক দাম। অনেক ব্র্যান্ডের খাবার বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। বেশিরভাগ খাবার ইউরোপ থেকেই আসে। বেলজিয়ামের লরা, এটা বিড়ালের খাবার। কয়েক মাস আগেও এটার দুই কেজির প্যাকেটের দাম ছিল ৬৫০ টাকা, সেটা এখন ৯০০ টাকা। এটা ক্যাট ফুড, যার তিনটা ফ্লেভারে আছে- চিকেন, ফিশ ও মিট। এখন অনেকেই বেশি দামি খাবার পোষা প্রাণীকে খাওয়াচ্ছে না, কিনছেনও কম।

স্থপতি ইকবাল মাজেদ বলেন, পোষা প্রাণীদের এসব খাবার বা যত্ন এখন আর বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। কেননা পছন্দের প্রাণীটি ঘরে বা বাইরের খাবার খেয়ে অসুস্থ হবে এটা কেউ চায় না। খরচ তো অনেক বেড়েছে, এটা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কারণেই। বিত্তবানদের হয়তো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত অনেকেই তার বিড়ালটাকে ভালো খাওয়াতে চায়, তাদের কষ্ট হচ্ছে।

ডিসেন্ট পেট শপের মালিক সারোয়ার আলম বলেন, এখন এমন অবস্থা দোকান ভাড়া দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ব্যবসা নেই। কদিন চলতে পারবো সেটা জানি না। আমরা প্রতিদিন নামাজ পড়ে দোয়া করি দেশের অবস্থা যেনো ভালো হয়ে যায়। যে পরিমাণ খাবার আছে সেটা দিয়ে দু-তিন মাস চলতে পারবো। সব ব্যবসায়ীর একই অবস্থা।

আরও পড়ুন: পোষা পাখি পালন, কেনা-বেচায় লাইসেন্স না নিলে জেল-জরিমানা

তিনি বলেন, করোনার মধ্যে ভালো ব্যবসা হয়েছে। তখন এত দাম বাড়েনি। কিন্তু এখন প্রতি কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। কবে নাগাদ দাম ঠিক হবে সেটা আসলে আমদানিকারকরা বলতে পারবে। বাড়তি দামে বিক্রি করতে আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।

Pet-4.jpg

তবে আমদানিকাররা জানিয়েছেন, পেট ফুডের খাবারের কোনো সংকট এই মুহূর্তে নেই। করণীয় ঠিক করতে তারা শিগগির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবেন।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়-বন্যায় প্রাণিসম্পদ রক্ষায় যেমন প্রস্তুতি নেবেন

পেট ফুড আমদানিকারক জিসান বলেন, শিগগির আমরা ইমপোর্টাররা বসছি। পেট ফুড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে সবাই বসে সমাধানের পথ খুঁজবো। আগে যতগুলো এলসি হয়েছে, ৭-৮ মাস কোনো সমস্যা হবে না। এর মধ্যে ব্যাংক আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরা এলসি পাবো। আমার মনে হয় না বড় কোনো সমস্যা হবে। আমরা সবাইকে সহযোগিতা করছি, যাতে ব্যবসায়ী কিংবা পোষা প্রাণীর মালিক সর্বোচ্চ সেবা পায়।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থ্রি এস ইমপেক্সের বিপণন কর্মকর্তা পল্লব কুমার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এলসি ট্রাই করছি, কিন্তু ওপেন করতে পারছি না। আগামীতে কী হবে জানি না। আমদানি না হলে খাবারের তো সংকট হবেই। ডলারের মূল্য ও ইন্টারেস্ট হার এখন অনেক বেশি, দেখা যাচ্ছে খাবারের দাম ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

এসএম/এসএইচএস/এমএস

পোষা প্রাণীদের এসব খাবার বা যত্ন এখন আর বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। কেননা পছন্দের প্রাণীটি ঘরে বা বাইরের খাবার খেয়ে অসুস্থ হবে এটা কেউ চায় না। খরচ তো অনেক বেড়েছে, এটা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কারণেই। বিত্তবানদের হয়তো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত অনেকেই তার বিড়ালটাকে ভালো খাওয়াতে চায়, তাদের কষ্ট হচ্ছে।

খাবারগুলো সবই বিদেশে থেকে আসে। এলসি বন্ধের কারণে পণ্য আসা বন্ধ হয়ে গেছে, পণ্যের মজুত ধীরে ধীরে কমছে। আগে যাদের এলসি করা ছিল তাদের পণ্যই আসছে। তিন মাস ধরে নতুন এলসি খোলা বন্ধ। নতুন করে পণ্য আসা বন্ধ। যে পণ্যগুলো আসছে ডলারের রেট বেশি হওয়ায়, সেগুলোর দামও বেশি।

শিগগির আমরা ইমপোর্টাররা বসছি। পেট ফুড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে সবাই বসে সমাধানের পথ খুঁজবো। আগে যতগুলো এলসি হয়েছে, ৭-৮ মাস কোনো সমস্যা হবে না। এর মধ্যে ব্যাংক আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরা এলসি পাবো। আমার মনে হয় না বড় কোনো সমস্যা হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।