করপোরেট কোম্পানির ডিম-মাংস উৎপাদন বন্ধ চায় প্রান্তিক খামারিরা

পোল্ট্রি খাবার (ফিড), মুরগির বাচ্চা ও মেডিসিনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছু উৎপাদন করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। আবার তারা ডিম ও মুরগিও উৎপাদন করছে। পাশাপাশি খামারিদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়েও (চুক্তিভিত্তিক) জড়িত অধিকাংশ কোম্পানি। এ কারণে তাদের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে টিকতে পারছে না দেশের সাধারণ খামারিরা। কোম্পানিগুলো বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।
এমন অভিযোগ করে করপোরেট কোম্পানিগুলোর মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদন এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বন্ধের দাবি জানিয়েছে ডিলার ও সাধারণ খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
আরও পড়ুন: সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। এসময় সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সুমন হাওলাদার বলেন, দেশের প্রান্তিক খামারিরা মুরগি ও ডিমের দাম না পেয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। এক লাখ ৬০ হাজার খামারের মধ্যে এখন বন্ধ হয়ে ৬০ হাজারে ঠেকেছে। তারপরও সব খামারে মুরগি নেই। প্রান্তিক খামারি না থাকলে এ সেক্টর টিকবে না।
আরও পড়ুন: পোল্ট্রি মাংসের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে তবুও উপেক্ষিত!
তিনি আরও বলেন, মুরগি ও ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন করপোরেট কোম্পানিগুলোর শেয়ার রয়েছে ১০ শতাংশ। তবে বাচ্চা, ফিড ও অন্যান্য উপকরণ তাদের শতভাগ দখলে। এসব উপকরণ ব্যবহার করে যখন তারা মাংস ও ডিম উৎপাদনে যাচ্ছে, তখন সাধারণ খামারিরা টিকতে পারছে না। এর মধ্যে আবার করপোরেট কোম্পানিগুলো বন্ধ হওয়া খামারে কমমূল্যে ফিড ও বাচ্চা দিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করছে। সেজন্য নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে তাদের হাতে। এটা বন্ধ করতে হবে। করপোরেট কোম্পানি পোল্ট্রি উৎপাদনে থাকতে পারবে না।
এসময় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন করুক। পাশাপাশি তাদের ফিড ও বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিটি বিভাগে হ্যাচারি ও ফিড মিল যেন করে। এতে করে ফিড ও বাচ্চার দামে সিন্ডিকেট বন্ধ হবে।
আরও পড়ুন: ঋণ নিয়ে পোল্ট্রি খামার, এক রাতেই আড়াই হাজার মুরগির বাচ্চার মৃত্যু
বাজারে ডিম ও মুরগির দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পেছনের কাহিনী উল্লেখ করে সুমন হাওলাদার জানান, ৫ জানুয়ারি প্রতি পিস মুরগির বাচ্চা ৯-১০ টাকা ছিল। এখন সেটা ৫৬ টাকা করেছে। যখন রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে খামারিরা মুরগি তুলছে, তখন এই অবস্থা। গত বছর ফিডের দামও দ্বিগুণ করেছে কোম্পানিগুলো।
তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিদের একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১১ দশমিক ১১ পয়সা, এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ ১৪৮ টাকা, এক কেজি সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা। এখন যে দাম তাতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে। তবে সাধারণ খামারিদের কাছে মুরগি নেই। এ মুনাফা যাচ্ছে করপোরেট কোম্পানির ঘরে।
আরও পড়ুন: খামারে ব্রয়লার মুরগি ১৩০ টাকা, বাজারে ২২০
এদিকে ডিম ও মুরগির বাজারের অস্থিতিশীল অবস্থার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দুর্বলতার কথা জানান খামারিদের এই নেতা।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পোল্ট্রি স্ট্রোক হোল্ডারদের নিয়ে ২০১০ সালে একটি জাতীয় কমিটি করে। কিন্তু তার কোনো কার্যকারিতা নেই। এরমধ্যে পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির কৌশলপত্র তৈরি করার কথা। এরপর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে কৌশলপত্রটি ৩০ দিনের সময় দিয়ে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। তারা একটি মিটিংও করে ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কৌশলপত্র তৈরি করতে পারেনি অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগিতে মাসে আয় ৬০ হাজার টাকা
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ফিড ও বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি থাকলেও তারা কোনো কোম্পানিকে তদারকি করেনি। তাই দিন দিন পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে কন্ট্রাক খামারে নেওয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের।
এসময় খামারিদের পক্ষ থেকে ২০০৮ পোল্ট্রি নীতিমালাসহ এ খাতের অন্যান্য নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। এছাড়া সব খামারিকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে সরকারি সুবিধা দেওয়া, সরকারের পক্ষ থেকে বাজার ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ, পোল্ট্রি খামারিদের জন্য সব ব্যাংকে জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসাইন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মনসুর রহমান, আলমগীর হোসাইনসহ সব জেলা থেকে আসা খামারিদের নেতারা।
এনএইচ/জেডএইচ/জিকেএস