সাধ্যের মধ্যে ভরছে না বাজারের ব্যাগ, দামে অস্বস্তি বাড়ছেই

আরও দু-এক পদের সবজি ও মসলা কেনার ছিল, আজ টাকায় কুলোয়নি। তেল-চিনি কম কম করে কিনেও হলো না, মাংসও কেনা গেল না এ সপ্তাহে। দু-তিন দিন পর আবারও বাজারে আসতে হবে।
শুক্রবার (১২ মে) সকালে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা বাজারে জাগো নিউজের প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান। এদিন তিনি পরিবারের জন্য পুরো সপ্তাহের বাজার করতে এসেছিলেন। তবে টাকায় টান পড়ায় প্রয়োজনের সবকিছু কেনা হয়নি তার।
আরও পড়ুন: বছরের ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে তিনগুণ
আরিফুর রহমান জানান, আগে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে পরিবারের পুরো সপ্তাহের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা যেত। এখন দাম বাড়ায় ওই টাকায় প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই কেনা সম্ভব হচ্ছে না। গুনতে হচ্ছে আরও প্রায় হাজার টাকা বেশি। দাম বেশি হওয়া ও পকেটে হিসাবের বাড়তি টাকা না থাকায় কিছু পণ্য বাদ রেখেই বাজার থেকে বাসায় ফিরছেন তিনি।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আরিফুর রহমানের মত অবস্থা অধিকাংশ ক্রেতার। সাধ্যের মধ্যে ভরছে না তাদের বাজারের ব্যাগ। মাছ-মাংস, শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। বাধ্য হয়ে পণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন তারা।
শুক্রবার রাজধানীর তালতলাসহ রামপুরা, মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগে থেকে চড়া দামের অনেক পণ্যের দাম নতুন করে আরও বাড়ছে। এসব পণ্যের সহসা দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। তাই অস্বস্তি নিয়ে বাজার থেকে ফিরছেন ক্রেতারা।
আরও পড়ুন: লাগামহীন সবজির বাজার
গতকাল বৃহস্পতিবার খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আগে থেকে অস্থির চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়েছে। ১৪০ টাকার কম কোথাও খোলা চিনি মিলছে না। আর বাজারে প্যাকেটজাত চিনিতো কয়েক সপ্তাহ ধরেই উধাও।
ঠিক এক সপ্তাহ আগেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল ১৮৭ টাকা। তবে নতুন দামের তেল এখনো আসেনি সবখানে। কিন্তু পুরোনো দাম লেখা মোড়কের বোতলও বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে।
মুদি দোকানে লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর খবরের সঙ্গে সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাও সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও পুরোনো তেল লিটারে ১২ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে না, লিটারপ্রতি ৩-৮ টাকা পর্যন্ত বেশি নিতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: ঈদের পরও কমেনি ব্রয়লার মুরগি-চিনির দাম
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মোড়কে দাম ১৮৭ টাকা লেখা, অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। ৩৭৪ টাকার দুই লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৩৯০ টাকায় এবং ৯০৬ টাকার ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১৫-৯২০ টাকায়।
এছাড়া আটা, ময়দা ও ডালের দাম নতুন করে না বাড়লেও সেগুলো বেশ আগেই বেড়ে বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
মসলার বাজারে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। ঈদের পর থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৩০-৩৫ টাকা বেড়ে এখন ৭০ টাকায় ঠেকেছে। যা দুদিন আগেও ৬০-৬৫ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি আদা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার কিছু কম বা বেশি। যা গত বছর একই সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে এখন আদার দাম তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। আর শেষ ঈদের পর থেকে বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে আমদানি করা চীনা রসুনের কেজিপ্রতি দাম ২০ টাকা ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।
মুদিপণ্য আর মসলাই নয়, সবজি ও মাছের বাজারও পুড়ছে বাড়তি দামের আগুনে। বাজারে এখন আলু ছাড়া অন্য কোনো সবজির কেজি ৬০ টাকার কমে মিলছে না। পেঁপে ও মুলার মতো তুলনামূলক কম চাহিদার সবজির কেজিও উঠেছে ৮০ টাকায়। যা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খুবই অস্বাভাবিক। এতদিন কমের মধ্যে থাকলেও আলুর দাম গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। মোটা দাগে দারুণ অস্বস্তি এখন সবজির বাজারে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা, খাসি ১৩০০
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দু-তিন দিনের ব্যবধানে নতুন করে সবজির দাম আরও বেড়েছে। তাতে এখন বাজারে প্রতি কেজি বেগুন, পটল, মুলা, বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, কাকরোল, বরবটি, ভেন্ডি, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা, সজনে ১২০-১৪০ টাকায়।
বাজারে ২২০ টাকা কেজির কমে তেলাপিয়া বা পাঙ্গাস মাছও কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। আর দেশি উন্মুক্ত জলাশয়ের শিং, টেংরা, বোয়াল খেতে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের কিছুদিন পর থেকে মাছের চাহিদা বেড়েছে। তখন থেকেই প্রতিদিনই আড়তে মাছের দাম বাড়ছে। বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন মাছের দাম কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বেশি।
আরও পড়ুন: বাড়তি দামে চিনি বিক্রি হলেই অ্যাকশনে যাবো: বাণিজ্যমন্ত্রী
অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকার মধ্যে। আর প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৪০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস ৮০০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, এখন ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও মাংসের দাম বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
এনএইচ/এমকেআর/জিকেএস