ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বুয়েটের মধ্যে চুক্তি সই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২১ এএম, ৩০ মে ২০২৩

ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উদ্ভাবন ও গবেষণা খাতে অবদান রাখতে অংশীদারত্বমূলক উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বুয়েট এর ‘রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (রাইজ) প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় প্লাস্টিক প্যাকেজিং সার্কুলারিটি নিশ্চিতে বাংলাদেশের একটি গবেষণা প্রকল্পকে পুরস্কৃত করেছে।

সোমবার (২৯ মে) ইউবিএল এবং রাইজ যৌথভাবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেটি ‘সাসটেইনেবল প্লাস্টিক প্যাকেজিং সার্কুলারিটি- কস্ট-এফেক্টিভ অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি’ টেকসই প্রকল্পের জন্য রাইজ, বুয়েট ও ইউবিএলের মধ্যে সহযোগিতামূলক উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ। এ গবেষণা প্রকল্পটি বাংলাদেশে ‘লেস প্লাস্টিক, বেটার প্লাস্টিক, নো প্লাস্টিক’ অর্থ্যাৎ ‘কম প্লাস্টিক, অধিকতর উন্নত প্লাস্টিক, প্লাস্টিক মুক্ত’ মডেল এর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বর্জ্যমুক্ত ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ইউবিএল এর প্রতিশ্রুতির অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (রাইজ)’ একটি গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র; যেটির লক্ষ্য বিশ্বমানের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল খাতে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা।

এ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক সহযোগিতা উদ্যোগটির লক্ষ্য পরিবেশগত জরুরি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা, ভবিষ্যৎ পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তিগত সমাধান এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান। এই সহযোগিতামূলক উদ্যোগ প্রাথমিকভাবে পরিবেশ এর ওপর প্রভাব কমিয়ে আনা, কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো, বিদ্যুৎ ব্যবহারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং পণ্যের কাঁচামালের জন্য টেকসই উৎপাদন খাত নিশ্চিতসহ পুনঃচক্রায়ন (রি-সাইকেলেবল), পুনর্ব্যবহারযোগ্য (রি-ইউজেবল) ও পচনশীল প্যাকেজিং পদ্ধতি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এছাড়া, এই অংশীদারত্ব গবেষণা ও উন্নয়নে সহযোগিতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি , নীতিমালা সংক্রান্ত প্রসার (পলিসি এডভোকেসি) এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বিষয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আরো টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানের ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে ছিলেন বুয়েটের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার। এ আয়োজনে ইউবিএল’কে প্রতিনিধিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার এবং তার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে অংশ নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার, পরিচালক, রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বুয়েট।

ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার বলেন, ইউনিলিভার এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে মূলত টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে। পৃথিবীর স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০২০ সাল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা অভিনব বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত করে আসছি, যেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- অভিনব প্যাকেজিং, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই মডেল তৈরি এবং বহুমুখী- অংশীজন (মাল্টি স্টেকহোল্ডার) আলোচনা ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের লক্ষ্যে সবার জন্য প্ল্যাটফর্ম গঠন। আমরা এখন প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে চলেছি, তাই এই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এমন গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

বুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ইউবিএল এবং বুয়েট প্রায় একইসময়ে বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং দেশের উন্নয়নে স্ব স্ব খাতে উভয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়া একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। তবে সেই সঙ্গে সরকারের উৎসাহ ও সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা নির্ভর অংশীদারত্ব তৈরির সুযোগ করে দেওয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ ভিশনের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি বিশ্বাস করি ইন্ডাস্ট্রি লিডার ও একাডেমিক ইনস্টিটিউশন এর শক্তিশালী অংশীদারত্ব অধিকতর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারি উদ্যোগে অবদান রাখতে পারে।

সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমান বিশ্বের প্রধানতম ৩টি সংকট হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের উপর হুমকি ও প্লাস্টিক দূষণ; এই সংকটগুলো মোকাবিলায় নীতি ও কৌশলগুলোর ওপর বাংলাদেশেরও ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ আমাদের পরিবেশে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আমি মনে করি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যাবস্থাপনাকে ব্যবসায়িক মডেলে নিয়ে এসে সমাধানের উপায় বের করা প্রয়োজন। এই সমঝোতা স্মারকের ফলশ্রুতিতে একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে ইউনিলিভার তার অভিজ্ঞতা বুয়েটের সঙ্গে বিনিময় করবে এবং প্লাস্টিক সমস্যা সমাধানে অভিনব উপায়গুলো সামনে নিয়ে আসবে বলে আশাবাদী।

আইএইচআর/জেএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।