নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ‘সংকট’
এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। চলতি (অক্টোবর) মাসের ১৯ তারিখের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। এরপর ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে এ প্রক্রিয়ায় এবার বড় ‘বাধা’ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন। এগিয়ে নিলে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন না শিক্ষার্থীরা।
মূলত এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কখন নেওয়া হবে, তা নিয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় পরীক্ষার সময়সূচি এগিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
নির্বাচনের কারণে এবার ভর্তি পরীক্ষা সব বিশ্ববিদ্যালয়ই এগিয়ে আনতে চাইছে। এখন দু-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি ডিসেম্বরে পরীক্ষা নিতে চায়, তাহলে তো শিক্ষার্থীদের জন্য চাপ হয়ে যেতে পারে।- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মুর্শেদ ভুঁইয়া
তাতে ‘আপত্তি’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় তুমুল প্রতিযোগিতা হয়। ভর্তিযুদ্ধে সাফল্য পেতে শিক্ষার্থীদের ভালো প্রস্তুতি প্রয়োজন। এইচএসসি পরীক্ষা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে শেষ হয়েছে। ফল প্রকাশেও দেরি হবে। এতে প্রস্তুতির জন্য স্বাভাবিক ন্যূনতম সময়ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে ভর্তি পরীক্ষা না নিলে সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি-সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। তাদের অভিমত, নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর নির্বাচনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা বাড়তে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদেও আসতে পারে পরিবর্তন। এছাড়া রমজান ও ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সবমিলিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভর্তি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতে পারে।
‘ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা শুরুর পর ও বলছে, ভালো প্রস্তুতির জন্য অন্তত ছয়-সাত মাস সময় দরকার। এখন যদি ডিসেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তাহলে মেয়েটার প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকবে। কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য ন্যূনতম সময় রাখার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।-ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক আরাফাতুল
ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে। শিগগির ভর্তি কমিটির সভায় এ নিয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও প্রকৌশল গুচ্ছভুক্ত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ও পরীক্ষা এগিয়ে আনতে পারে। তবে সাধারণ গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দুই মাস এগিয়ে আনতে চায়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যেই ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আগামী সপ্তাহে ভর্তি কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কারণে এ সংকট বেড়েছে। যদি একই ক্যাটাগরির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যেত, তাহলে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল।- ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবার এপ্রিল মাসে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর ক্লাস শুরু হয় আগস্টের মাঝামাঝি। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবার ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে (প্রতি সপ্তাহে একটি করে ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এবার তারাও ডিসেম্বরের মধ্যেই ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে কাজ শুরু করেছে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায়।
আরও পড়ুন
স্কুলে ভর্তিতে লটারি নাকি পরীক্ষা, দোলাচলে অভিভাবকরা
এক বছরেই এসএসসি পাস ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২০৭৭ সন্তান!
এক বছরে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা কমেছে ১০ কোটি
বুয়েটে গত বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এবার অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনায় দেশের শ্রেষ্ঠ এ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে হাঁটতে পারে। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে।
মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমবিবিএস এবং বিডিএসে ভর্তি পরীক্ষাও এক থেকে দেড় মাস এগিয়ে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শুরুতে এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে। আগামী ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
সময়সূচির ‘ফাঁদ’, বিপাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও
ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে তোড়জোড় করছে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিট রয়েছে। কোথাও টানা দু বা তিনদিন ধরে, আবার কোথাও প্রতি সপ্তাহে একটি করে ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
সেক্ষেত্রে ঢাকা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ডিসেম্বরে পড়ে যেতে পারে। তাছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাও ডিসেম্বরে হতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়বে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই সময়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা একদিন আগে-পরে ভর্তি পরীক্ষা পড়ে যেতে পারে।
আবার জানুয়ারিতেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল গুচ্ছ ও কৃষি গুচ্ছের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রেও সময়সূচির ফাঁদে পড়তে পারেন ভর্তিচ্ছুরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মুর্শেদ ভুঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনের কারণে এবার ভর্তি পরীক্ষা সব বিশ্ববিদ্যালয়ই এগিয়ে আনতে চাইছে। এখন দু-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি ডিসেম্বরে পরীক্ষা নিতে চায়, তাহলে তো শিক্ষার্থীদের জন্য চাপ হয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ভর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ডিসেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে। পরীক্ষার সময়সূচি করার ক্ষেত্রে আমরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করবো। অন্যদেরও উচিত আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করা। তাহলে সময়সূচির যে ফাঁদ, সেটা এড়ানো সম্ভব।’
সময়সূচি ঠিক করার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হতে পারে বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলামও। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। আর মাঝামাঝি সময়ে শুরু হবে রোজা। এরপর আবার ঈদের ছুটি। সবমিলিয়ে এবার ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনার বিকল্প নেই। তবে সবাই যদি ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনে, তাহলে পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করা জটিল হবে।’
ভর্তির প্রস্তুতিতে পিছিয়ে শিক্ষার্থীরা
২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছিল ১৫ অক্টোবর। এরপর ভর্তি পরীক্ষার জন্য তিনমাস প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তার আগের বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয় ২৮ জুলাই। সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে।
সেই হিসেবে এইচএসসির ফল প্রকাশের পর প্রায় ছয়মাস সময় পেয়েছিলেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তার আগের বছর ২০২২ সালেও এইচএসসির ফল প্রকাশের পর প্রায় পাঁচ মাস প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের।
তবে এবার ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনায় প্রস্তুতি নিতে একেবারেই কম সময় পাবে ভর্তিচ্ছুরা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্যমতে, অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে (১৯ অক্টোবরের মধ্যে) এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। এরপর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।
বুয়েট ও মেডিকেল কলেজগুলোও ডিসেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায়। সেক্ষেত্রে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে মাত্র এক মাসের মতো সময় পাবে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রস্তুতিতে পিছিয়ে থেকে ভর্তি পরীক্ষার মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে হবে তাদের। একই সঙ্গে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে চলতি বছর এইচএসসি পাস করাদের ভর্তির জন্য নির্বাচিত হওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও।
ঢাকার একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন আনিসুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আনিসুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঢাবি-বুয়েটে এবং মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা হবে শুনছি। এটা হলে আমাদের সঙ্গে চরম বৈষম্য করা হবে। আমরা এইচএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ করেছি ১৯ আগস্ট। ব্যবহারিক শেষ হয়েছে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে। মাত্র এক-দেড়মাস প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। এটা কষ্টসাধ্য হবে। অন্যবার পাঁচ-ছয় মাস সময় দেওয়া হয়।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন রামিমা শিউলি। তার বাবা আরাফাতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়ে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এবার এইচএসসিতেও গোল্ডেন পাবে আশা করছি। ও ভালো ছাত্রী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আর এইচএসসি পরীক্ষা এক জিনিস নয়।’
‘ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা শুরুর পর ও বলছে, ভালো প্রস্তুতির জন্য অন্তত ছয়-সাত মাস সময় দরকার। এখন যদি ডিসেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়, তাহলে মেয়েটার প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকবে। ও মেডিকেল, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চেষ্টা করছে। কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য ন্যূনতম সময় রাখার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।’ যোগ করেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক আরাফাতুল।
ভর্তি পরীক্ষার স্বাভাবিক সময় কখন, কেন এ সংকট
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে টানা চার বছর এবং জুলাই আন্দোলনের কারণে গত বছর এসএসসি-এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি এলোমেলো হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায়ও। পিছিয়ে যায় শিক্ষাবর্ষ। ভর্তির আগেই কোথাও ছয় মাসের, কোথাও আট মাসের জটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
নিয়ম অনুযায়ী দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জানুয়ারি মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর কথা থাকলেও সবশেষ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা শুরু হয়েছে জুলাই মাসে। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবীনদের ক্লাস শুরু হয়েছে আগস্টের শেষ সপ্তাহে। গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়েও আগস্টে ক্লাস শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, ক্লাস শুরুর আগেই সাত থেকে আট মাসের জটে পড়েছেন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এবার আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে সংকট আরও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনে কী করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)?
জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কারণে এ সংকট বেড়েছে। যদি একই ক্যাটাগরির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যেত, তাহলে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পদ্ধতিতে আসতে চায় না। আমরা বিদ্যমান সাধারণ গুচ্ছ, প্রকৌশল গুচ্ছ ও কৃষি গুচ্ছ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজেদের স্বার্থ ছেড়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বুয়েট চায় সবচেয়ে ভালো ছাত্র-ছাত্রী তারা নেবে। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সেটা চায়। পিছিয়ে থাকতে চায় না রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রামসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। ফলে সবাই আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আয়ের বিষয়টিও রয়েছে। তারা এসব স্বার্থে গুচ্ছভুক্ত হতে চায় না। একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগেও সায় দেয় না। তারপরও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের মতামত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারকে জানাবো।’
এএএইচ/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস