ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস
রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষা বোর্ডে অযোগ্যরা, ভুল পলিসিতে ফল বিপর্যয়
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে। তবে এর কারণ সাম্প্রতিক এক-দুই বছরের সিদ্ধান্ত বা পরিস্থিতি নয়। দীর্ঘমেয়াদে দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়। তারা সঠিক পলিসি বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
এ কারণে এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় ঘটছে। সামনে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস।
অধ্যাপক দীপকেন্দ্র নাথ বলেন, গত দুই বছর আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা কিছুর প্রভাব পড়েছে শিক্ষায়। যেটার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলে। বর্তমানে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ক্লাস ঠিকমতো নেন না। সরকারি কলেজেও চলছে স্বেচ্ছাচারিতা।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাবেক এ অধ্যক্ষ বলেন, কোথাও সেভাবে আর পড়াশোনাটা নেই। বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোচিংনির্ভর। তবে কোচিংয়েও পড়াশোনা হয় না৷ বরং তারা বাসা থেকে পড়ে আসতে বলে। আর এসবের প্রভাব এইচএসসির ফলাফলে দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক এ বোর্ড চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক অযোগ্য মানুষ নিয়োগ হয়েছে। কীভাবে পলিসি তৈরি করবেন সেটায় জানেন না তারা। তারা পরীক্ষক ও শিক্ষকদের সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরও বেশি ফলাফল বিপর্যয় হবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় একযোগে সব শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার অংশ নেন ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ফেল করেছেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন। গড় ফেলের হার ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এবার সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
পরীক্ষার ফলাফলে এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে সব দিক দিয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। এ বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন। আর ছাত্র ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। ছাত্রীদের গড় পাসের হার ৬২.৯৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৫৪.৬০ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৬৯ হাজার ৯৭ জনের মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ জন এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন।
এএএইচ/এমএএইচ/এএসএম