প্রচ্ছদশিল্প বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে বইমেলা : মামুন হোসাইন
চিত্রশিল্পী মামুন হোসাইন অংকনশৈলী দিয়ে আলাদা ভুবন নির্মাণ করেছেন। তার বহুমাত্রিক কাজের নান্দনিকতা অল্প সময়ের মধ্যে এনে দিয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনি হয়ে উঠেছেন অনন্য নাম। বরাবরের মত এবারের বইমেলায়ও তিনি ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যস্ততা ও আঁকাআঁকির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন—
জাগো নিউজ: প্রচ্ছদশিল্প বিকাশে বইমেলা কতটা ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন?
মামুন হোসাইন: দেশে সারা বছর যে পরিমাণ বই প্রকাশিত হয়, তার সিংহভাগ হয় একুশে বইমেলা কেন্দ্রিক। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রচ্ছদশিল্পী, লেখক, প্রকাশক এবং সংশ্লিষ্ট সবাই ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। এটা শুরু হয় ফেব্রুয়ারির আগে থেকেই। কয়েক মাস ধরেই চলে এ মহান কর্মযজ্ঞ। হাজার হাজার নতুন বই, নতুন প্রচ্ছদ। ফলে প্রচ্ছদশিল্প বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে অমর একুশে বইমেলা—এ কথা বলা যায়।
জাগো নিউজ: এবারের বইমেলায় আপনার ব্যস্ততা সম্পর্কে বলুন—
মামুন হোসাইন: প্রচণ্ড চাপে আছি। দিন-রাত সমানে কাজ করছি।
জাগো নিউজ: সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন—এজন্য আপনাকে অভিনন্দন। এ যাবৎ আর কী কী পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন?
মামুন হোসাইন: ধন্যবাদ। অসংখ্য মানুষের প্রশংসা, ভালোবাসা পেয়েছি। প্রশংসা মানেই সেটা সম্মানের, স্বীকৃতির। প্রাতিষ্ঠানিক যদি ধরো তবে টিআইবি পুরস্কার, ডেইলি স্টার পুরস্কার, দিগন্তধারা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি। চারুকলায় ছাত্র জীবনে একাধিক শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছিলাম। এই তো।
জাগো নিউজ: দেশে অলংকরণ ও প্রচ্ছদশিল্পীদের কোন সংগঠন আছে কি? এর প্রয়োজনীয়তা বলুন—
মামুন হোসাইন: আমার জানামতে নেই। আর প্রয়োজনের কথা যদি বলো, তবে বলবো প্রয়োজন আছে। এটি একটি সংগঠিত সমমনা সমচিন্তার সংগঠন। নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে সচেতন। নোংরা রাজনীতিমুক্ত। ভালো কাজ করার অঙ্গীকার ইত্যাদি। পেশাদার একটি শিল্পীদলের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: প্রচ্ছদ ও অলংকরণ শিল্পকে বিকশিত করতে সরকারের কাছে কোন প্রত্যাশা আছে কি?
মামুন হোসাইন: যেহেতু কোনো সংগঠন নাই, তাই আপাতত এ নিয়ে ভাবনাও নাই।

জাগো নিউজ: পারিবারিকভাবেই কি আপনার আঁকাআঁকির চর্চা শুরু?
মামুন হোসাইন: ঠিক চর্চা বলতে যা বোঝায় ঠিক সে রকম নয়। ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখেছি নকশী কাঁথা আঁকতে। চাদরে, বালিশে, রুমালে মা আঁকছেন ফুল, পাখি, লতা-পাতা। সেগুলো যত্নে সেলাই করছেন। সংসারের অন্যান্য কাজ সেরে যতটুকু সময় পান আঁকছেন। আমি দেখতাম মায়ের আঁকা। আমিও আঁকতাম মনের খুশিতে। যখন যেখানে খুশি। কাগজে, দেয়ালে, মাটিতে। এই তো, এমন চর্চা হতো আমাদের পরিবারে।
জাগো নিউজ: ২০১৯ সালে এসে বইয়ের এ কাজের মধ্যে কতটা পার্থক্য দেখছেন?
মামুন হোসাইন: পার্থক্যটা চোখে পড়ার মত। আমি প্রথম প্রচ্ছদ করেছিলাম চারুকলায় ভর্তিরও আগে। তখন এ বিষয়ে মোটেও কারিগরি জ্ঞান ছিল না। ‘আল জাহারা ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার’ শিরোনামে একটি গাইড বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিলাম। কাঠের বলকে ছিল কাজটা। আমার সৌভাগ্য যে, প্রিন্ট মিডিয়ার এমন একটি পুরনো মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখন ২০১৯ সাল। প্রকাশনা জগতে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। হাতের মুঠোয় সারা পৃথিবী। কোথায় কী হচ্ছে দেখা যাচ্ছে। নতুন অনেক মেধাবী শিল্পী দারুণ সব কাজ করছেন।
জাগো নিউজ: আমাদের দেশে প্রচ্ছদ ও অলংকরণকে কি পেশা হিসেবে নেওয়া যায়?
মামুন হোসাইন: নিশ্চয়ই নেওয়া যায়। আমাদের শিল্পীরা দেশ এবং দেশের বাইরেও কিন্তু কাজ করছেন। তবে ভালো কাজ জানতে হবে। আমাদের দেশে কাজ করার একটি মুশকিলের জায়গাও আছে। সেটা হলো পেশাদারিত্বের অভাব। লেখক, শিল্পী, প্রকাশক এই তিনের মধ্যে অপেশাদার চর্চা দেখা যায়। ফলে এখানে ঠকে যাওয়া হতাশার গল্প তৈরি হয়।
জাগো নিউজ: আপনিসহ দেশের কয়েকজন চিত্রশিল্পীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, একেকটি প্রচ্ছদের জন্য উচ্চমূল্য নিয়ে থাকেন—এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
মামুন হোসাইন: ওরে বাবা! রীতিমত অভিযোগ! আসলে বিষয়টি নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। অনেক তিক্ত ঠকে যাওয়া হতাশার গল্প উঠে আসবে। তারচেয়ে বরং তোমাকে পাল্টা প্রশ্ন করি, ‘একটি প্রচ্ছদের মূল্য কত হলে উচ্চমূল্য বলা হয়?’ একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশি (হা-হা)।
জাগো নিউজ: দেশের বাইরের কোন প্রকাশনা সংস্থার কাজ করেছেন কি?
মামুন হোসাইন: করেছি।

জাগো নিউজ: আমাদের দেশের প্রচ্ছদশিল্পদের আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি কেমন?
মামুন হোসাইন: আমাদের শিল্পীরা দেশের বাইরেও কাজ করছেন এবং ভালো কাজ করছেন।
জাগো নিউজ: আপনার আঁকাআঁকি বিষয়ক বিদ্যায়তন ‘টানটোন’র কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন—
মামুন হোসাইন: টানটোন চলছে। ৩ বছর থেকে শুরু করে যে কোন বয়সী এখানে ভর্তি হতে পারে। ছবি আঁকা এবং গান—দুটো বিষয়ে সপ্তাহে চার দিন ক্লাস চলে। বুধ, বৃহস্পতি বিকেল ৩টা থেকে ৫টা। শুক্র, শনি সকাল ১০টা থেকে ১২টা। আবার বিকেলেও ক্লাস আছে। গানের ক্লাস শুধু শনিবার বিকেলে।
জাগো নিউজ: আপনার অংকনশিল্পের মাঝে আমাদের বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী এস এম সুলতানের ছায়া দেখতে পাই—
মামুন হোসাইন: মহান শিল্পী এস এম সুলতান। বাংলার কৃষকের সুখ-দুঃখ, লড়াই, সংগ্রাম, সামর্থ, শক্তি এমন গভীরভাবে আর কোন শিল্পী দেখেননি। আমি ওনাকে গুরু মানি। ওনার শিল্প দর্শন আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
> আরও পড়ুন- তরুণরা সাহিত্যের প্রেমে পড়ছে : শামসুজ্জামান খান
জাগো নিউজ: আপনি তো লেখালেখিও করছেন, এ সম্পর্কে কিছু বলুন—
মামুন হোসাইন: আমার লেখালেখি উল্লেখযোগ্য না। মাঝেমধ্যে দু’একটা গল্প, ছড়া লিখে ফেলি। অন্যরকম আনন্দ পাই, যেটা এঁকে পাই না। দু’টো গল্পের বই প্রকাশ হয়েছে। আমার লেখার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলেন শিল্পী ধ্রুব এষ। দাদার সাথে পরিচয় না হলে এটুকুও বোধ হয় লিখতাম না।
জাগো নিউজ: ব্যস্ততার মাঝে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মামুন হোসাইন: তোমাকেও ধন্যবাদ। ভালো থেকো।
এসইউ/জেআইএম