হামলার প্রতিবাদে গানে গানে সংহতি-সমাবেশ করবে ছায়ানট
আবহমান বাংলা সংস্কৃতির ওপর সহিংস হামলার প্রতিবাদে গানে গানে সংহতি-সমাবেশের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। আগামী মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ছায়ানট জানিয়েছে, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ সংস্কৃতিসেবী ও প্রগতিশীল মানসের সকলকে সংস্কৃতির ওপর হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সমাবেশে সম্মিলিতভাবে গাওয়া হবে- মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম, ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি, চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল, ও আমার দেশের মাটি, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, মানুষ ছেড়ে খ্যাপা রে তুই, মানুষ হ’ মানুষ হ’, তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর, হিমালয় থেকে সুন্দরবন এবং আমার প্রতিবাদের ভাষা গানগুলো।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে ছায়ানট ভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে এসে হামলা চালায়। প্রথমে পার্কিং লটে আগুন দেওয়া হয়, পরে ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা হয়। এ সময় হামলাকারীরা ‘ভারতের দালাল’, ‘ভুয়া’, ‘নারায়ে তাকবীর’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ভাঙো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়। প্রয়াত সঞ্জীদা খাতুনের প্রতিকৃতি ভাঙচুরের সময় তাকে ‘নাস্তিক’ বলে গালিগালাজ করা হয়।
হামলাকারীরা মিলনায়তনে থাকা তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি বই, কাগজপত্র তছনছ করা হয়। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, সিসিটিভি ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়। মাটির তৈরি চারুকর্ম, শিল্পকর্ম এবং কক্ষ ও অফিসের অধিকাংশ আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ রমেশ চন্দ্র স্মৃতি মিলনায়তন, মূল মিলনায়তন এবং শৌচাগারও হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। এ ছাড়া বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের একটি অংশ বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে ড্রয়ার ভেঙে টাকা-পয়সা খোঁজে এবং কিছু বাদ্যযন্ত্র ও সামগ্রী নিয়ে যায়।
এ ঘটনার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনের ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় শুক্রবার ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছে ছায়ানট। মামলায় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এমআই/এলআইএ