হৃদয়-সুজানার ছাড়াছাড়ি (দেখুন ছবিতে)
‘আমি সব চেষ্টাই করেছিলাম হৃদয়কে ভালো রাখার। চেষ্টা করেছিলাম বখে যাওয়া একটা ছেলেকে ভালোবাসা দিয়ে সংসারী আর দায়িত্ববান করে তুলতে। আমি পারিনি হৃদয়কে ধরে রাখতে। ওকে বদলাতে গিয়ে নিজের জীবনটাকেই নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি।’-আধো কান্না আধো অভিমান নিয়ে এভাবেই জাগোনিউজকে নিজের ব্যর্থ দাম্পত্যের কথা বলে গেলেন সুজানা। 
আর এই ফোনালাপে নিশ্চিত হওয়া গেল গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেয়া খবরটা মিথ্যে নয়। সত্যি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে মডেল ও অভিনেত্রী সুজান এবং সঙ্গীত তারকা হৃদয় খানের।
গত দুই দিন ধরেই এই খবরটা হাওয়ায় ভাসছিলো। সত্যতা জানতে বারবার হৃদয়-সুজানার ফোনে ট্রাই করা হয়েছে। অবেশেষে সোমবার সন্ধ্যায় মিললো সুজানার মন্তব্য। মাঝদরিয়ায় সর্বশেষ অবলম্বন কাঠের টুকরাটা হারানোর পর অনিশ্চয়তায় পড়া নাবিকের মতোই অসহায় শোনাল সুজানার গলা। জানতে চাইতেই অনর্গল বলে গেলেন, গত দুই দিন ধরেই কথা চলছিলো তালাকের। অবশেষে আজ আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে ঢাকার মনিপুরিপাড়ায় একটি কাজি অফিসে গিয়ে তালাকনামায় স্বাক্ষর করেছেন হৃদয়-সুজানা।
সাড়ে তিন বছর প্রেম করার পর গত বছরের ১ আগস্ট মডেল সুজানাকে বিয়ে করেন হৃদয়। মাস তিনেক যেতে না যেতেই তাঁদের দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। বেশ কিছুদিন আলাদাও থেকেছেন তারা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তালাকেই গড়াল এই দাম্পত্যের পরিণতি।
উল্লেখ্য, এটি ছিল তাদের দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে।
এক বছর না পেরুতেই আলোচিত এই দুই তারকার বিচ্ছেদে অবাক হয়েছেন মিডিয়ার অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে সুজানা বলেন, ‘অবাক আমি নিজেই কী কম হয়েছি! আমি কখনোই বলিনি হৃদয়কে আমি ভালোবাসি। প্রেমটা ছিলো ওর একতরফা। একটা ছেলে সারাক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি বলতো। আমাকে না পেলে মরে যাবে বলে হুমকি দিতো। গানে গানে, ফেসবুক, রেডিওতে বলে বেড়াত আমি ওর জীবনের সব। একতরফা প্রেমটা এভাবেই আমাকে বাধ্য করলো হৃদয়কে বিয়ে করতে। নিজের স্বার্থে আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওকে বদলে ফেলার। বিয়ের আগে ও বেশ বদলেও গিয়েছিলো। কিন্তু বিয়ের পর দেখলাম সম্পূর্ণ অচেনা এক হৃদয়কে।’ বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে সুজানা বলেন, ‘বিয়ের পর ও আমার পরিবার, পেশাকে অসম্মান করতে শুরু করলো। মিডিয়ার মানুষ হয়ে ও মিডিয়ার লোকদের খারাপ বলে। আমাকে সন্দেহ করে। কোনো কাজ করতে দেয় না। আমি বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কোনো লাভ হয়নি। উল্টো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। আমার উপর মানসিকভাবে নির্যাতন চালায়। ওর মতো একরোখা আর দায়িত্বহীন স্বামীরাই পুরুষশাসিত এ সমাজের জন্ম দেয়। শেষপর্যন্ত উপায় না দেখে আমার পরিবারের পরামর্শে আমি তালাকের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছি।’
সুজানা এও বললেন, ‘সবাই জানে মিডিয়ায় আমার রেপুটেশন কেমন। আর এটাও জানে হৃদয় কেমন ছেলে। আমি যখন ওর সাথে সম্পর্কে জড়াই তখন অনেকেই আমাকে সাবধান করেছেন। কিন্তু হৃদয়ের পাগলামির জন্য আমি ওকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। ভালোবাসার ঋণ আজ সে কষ্ট, অপমান আর তালাক দিয়ে শোধ করলে।’
হৃদয়ের পরিবার বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে জানতে চাইলে সুজানা বলেন, ‘যারা হৃদয়কে ভালো করে জানেন তারা এটাও জানেন, ওর সাথে ওর পরিবারের কোনোকালেই বনিবনা হতো না। ওর বাবার সাথে সমস্যা ওর অনেক আগে থেকেই। এসব কারণেই হৃদয়ের আগের স্ত্রী চলে যায়। আমার সাথে যখন ওর পরিচয় হয় ও তখন পল্টনে একা বাসা নিয়ে থাকতো। বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ হতো না। আমি বারবার চেয়েছি শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির আশীর্বাদ পেতে। কিন্তু ওই আমাকে এ ব্যাপারে এগুতে দেয়নি। তবু মনের কষ্ট মনে নিয়ে আমি স্বামীর ভালোবাসায় সুখী হতে চেয়েছিলাম। সেটা হৃদয় হতে দেয়নি। আমাকে দেয়া যায় সব কষ্ট আর অপমান ও দিয়েছে। তবু আমি দোয়া করি ও যেন ভালো হয়।’
ব্যাপারটি সম্পর্কে জানতে হৃদয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোন ও খুদে বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। হৃদয়ের পারিবারের সঙ্গেও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলা যায়নি।
তবে সুজানা জানালেন, হৃদয় খান মিরপুরে নিজের স্টুডিওতেই থাকছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের শুরুর দিকে পূর্ণিমা আকতার নামে একটি মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেন হৃদয় খান। ছয় মাসের মাথায় হৃদয় খানের সেই সংসার ভেঙে যায়।
অন্যদিকে ২০০৬ সালে ঢাকার একটি বায়িং হাউসের কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদকে প্রথম বিয়ে করেন সুজানা। সেই বিয়ে টিকে ছিল মাত্র চার মাস।
পরবর্তীতে একটি গানের মডেল হিসেবে হৃদয় খানের সঙ্গে পরিচয় হয় সুজানার। এরপর দীর্ঘসময় সুজানাকে ভালবাসার প্রস্তাব দেন হৃদয়। কিন্তু সুজানা পাত্তা দেননি। হৃদয়ের নাছোড়বান্দা ভালবাসার কাছে হার মেনে অবশেষে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই প্রেমের ডাকে সাড়া দেন সুজানা।
সেই সুবাদে গেল বছরের ১ আগস্ট রাতে রাজধানীর মিরপুরে সুজানার বাড়িতে আংটি বদল হয় এ দুই তারকার। পরে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সুজানাকে উঠিয়ে নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা আর হলো না। শ্বশুড়বাড়ি যাওয়ার আগেই বাবার বাড়ি ফিরলেন সুজানা। মাঝখানে কেবল কিছুদিন স্বামীর কাছে থাকার অভিজ্ঞতাই সঞ্চয় হলো।
এলএ/আরআইপি