কবিগুরুর আধুনিক কাবুলিওয়ালা (দেখুন ছবিতে)
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ছোট গল্পের চরিত্র কাবুলিওয়ালাকে প্রতিপাদ্য করে একটি দারুণ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। গ্যাটে ইন্সটিটিউটের আয়োজনে এবং দৃক গ্যালারির সহযোগিতায় আগামী ২৪ এপ্রিল, ২০১৫, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় দৃক গ্যালারিতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ‘কাবুল থেকে কোলকাতা : সম্পর্ক, স্মৃতি ও পরিচয়’ শিরোনামে এই ভিন্নধর্মী আলোকচিত্র প্রদর্শনী। 
উদ্বোধন আয়োজনের পর প্রদর্শনীটি আগামী ৬ মে পর্যন্ত, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা, সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 
কাবুলিওয়ালা অথবা কাবুলের লোক মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প ‘কাবুলিওয়ালা’র মাধ্যমে ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। আফগানিস্তানের লোকেরা কয়েকশ বছর ধরে ভারতে যাতায়াত করে আসছিল, তবে ১৮৯২ সালে কবিগুরুর ‘কাবুলিওয়ালা’ তাদেরকে একটি সহমর্মী ও দীর্ঘস্থায়ী পরিচিতি এনে দেয় সকলের কাছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর রচনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই দুই আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মোসকা নাজিব ও নাজেস আফরোজ যৌথভাবে ৩ বছর দীর্ঘ একটি প্রজেক্টে হাত দেন যার মূল লক্ষ্য ছিল হারিয়ে যাওয়া কাবুলিওয়ালা গোষ্ঠীর কয়েক দশক ধরে হওয়া সামাজিক পরিবর্তনগুলোকে তুলে ধরা। এই দুই আলোকচত্রী হারিয়ে যাওয়া কাবুলিওয়ালাদের এখনকার অবস্থানের কথাও তাদের আলোকচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু ভাষায় অনুদিত এবং মঞ্চায়িত হয়েছে। এই গল্পে কবিগুরু লিখেছেন একজন সুঠামদেহী আফগান পুরুষের কথা যিনি আরেক দেশে এসে দ্বারে দ্বারে শুকনো ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই কাবুলিওয়ালার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয় ছোট এক বাঙালি মেয়েশিশুর সঙ্গে যে কিনা কাবুলিওয়ালাকে তার দেশ আফগানিস্তানে রেখে আসা একমাত্র কন্যার কথা মনে করিয়ে দেয়। ভারতীয় এবং অন্যান্য বিদেশি ভাষায় অনুদিত হয়ে ‘কাবুলিওয়ালা’ বরাবরই পাঠকদের কাছে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, পেয়েছে জনপ্রিয়তা।
ভারতে বসবাসরত আফগান বংশোদ্ভূত নারী মোসকা নাজিব বলেন, ‘নিজের মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকার সুবাদে, আমি সবসময়েই আত্মপরিচয় এবং নতুন জায়গা খোঁজে আকৃষ্ট হয়েছি। এ ভাবনাটাই আমাকে ভারতে বসবাসরত আফগানিস্তানের অন্যতম পুরাতন গোষ্ঠীর এ সময়ের জীবনযাপনকে আলোকচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে আগ্রহী করেছে।’
নাজিব আশা করেন এই আলোকচিত্রগুলোর মাধ্যমে দর্শক কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারবেন জন্মসূত্রে পাওয়া নিজস্ব পরিচয়কে ধরে রেখে একটি নতুন দেশে, নতুন জায়গায় গিয়ে বসতি গড়ে তোলাটা কতোটা কঠিন!
নাজিব আর বলেন, ‘আমি এই ছবিগুলো তোলার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করেছি যে কী করে একটি গোষ্ঠী ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজস্ব সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়কে আগলে রেখেছে। এবং তাদেরকে বোঝার মাধ্যমে আমি আমার নিজের দেশ আফগানিস্তানের মানুষের সঙ্গে ওদের একটি যোগসূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।’
অন্যদিকে ভারতীয় সাংবাদিক নাজেস আফরোজ পুরো বিষয়টাকে একটু অন্য দৃষ্টিতে সাজিয়ে প্রদর্শনীতে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘একসময় কলকাতা শহরটি ছিল দারুণ বৈচিত্র্যেময়। আর এই বিচিত্র শহরই আজকের এই আমাকে ‘আমি’ করে তুলতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি যে গত কয়েক দশকে সেই বৈচিত্র্য কোথায় যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে, এবং এই পরিবর্তন আমার জন্য কোনভাবেই সুখকর নয়। এই আলোকচিত্র সিরিজের মাধ্যমে আমি সেই পুরাতন বৈচিত্র্যময় কলকাতাকে সকলের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বলা যায় কাবুলিওয়ালার কাঁধে চড়ে এটি কলকাতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি মাধ্যম মাত্র!’
এই আলোকচিত্র সিরিজটি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক; পরিচয়হীনতা এবং একটি নতুন পরিচয় ধারণ করা-এসবকিছু নিয়ে একটি ধারণা পেতে সাহায্য করবে, ভাবিয়ে তুলবে দর্শককে।
এলএ/পিআর