ওস্তাদ রশিদ খানের বর্ণময় সংগীত জীবন
থেমে গেল উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের খ্যাতিমান শিল্পী ওস্তাদ রশিদ খানের জাদুকরী কণ্ঠ। আজ (৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান রশিদ খান। তার মৃত্যুতে সংগীতের একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়েছে।
সদ্যপ্রয়াত ওস্তাদ রশিদ খান এক বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনের অধিকারী ছিলেন। তবে তার সংগীত জীবনের শুরুটা ছিল গল্পের মতো। শৈশবে গান ছিল রশিদ খানের অপছন্দ বিষয়। অথচ তিনিই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে ‘ওস্তাদ’র তকমা লাভ করেছিলেন।
খ্যাতিমান এ শিল্পীর মৃত্যুতে শাস্ত্রীয় সংগীতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার চিরবিদায়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংগীত ভুবনে।
আরও পড়ুন: ওস্তাদ রশিদ খান মারা গেছেন
ওস্তাদ রশিদ খান ভারতের উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার মামা ওস্তাদ নিসার হোসেন খানের (১৯০৯-১৯৯৩) কাছ থেকে সংগীতের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ওস্তাদ গোলাম মুস্তফা খানের ভাগ্নে ছিলেন।

শৈশবে গানের প্রতি তার তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। তবে রশিদ খানের মাঝে যে সংগীতের রাজ্য রয়েছে তা তার চাচা গোলাম মুস্তফা খান তার টের পান। এরপর থেকেই কিছু সময়ের জন্য তাকে মুম্বাইয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
তিনি জীবনের প্রধান প্রশিক্ষণ নিসার হোসেন খানের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। প্রাথমিকভাবে বাদায়ুঁনে তার বাড়িতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অনুশীলন করাতেন রশিদ খানকে৷
শৈশবে রশিদ খান সংগীতের এসব পাঠ পছন্দ না করলেও সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণ আজ তার দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৮ বছর বয়স থেকে রশিদ খান প্রকৃত অর্থে তার সংগীত প্রশিক্ষণ উপভোগ করতে শুরু করেন। এরপর তিনি সুরলোকের বাসিন্দা হয়ে যান। হারিয়ে যান সংগীতের অসীম রাজ্যে।
১৯৭৭ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে রাশিদ তার প্রথম সংগীতানুষ্ঠান শুরু করেন। এর পরের বছর ১৯৭৮ সালে তিনি দিল্লিতে একটি আইটিসি কনসার্টে পারফর্ম করেন।
এরপর ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে, যখন নিসার হুসেন খান আইটিসি সংগীত গবেষণা একাডেমি (এসআরএ), কলকাতায় চলে যান, রশিদ খানও ১৪ বছর বয়সে এ একাডেমিতে যোগ দেন।

রশিদ খান খাঁটি হিন্দুস্তানি সংগীতকে হালকা বাদ্যযন্ত্রের ঘরানার সাথে মিশ্রিত করার জন্যও পরীক্ষা করেছেন। শাস্ত্রীয় সংগীতের ভিত হলেও বলিউড ও টালিউডের অনেক সিনেমায় গান গেয়েছেন উস্তাদ রাশিদ খান। প্রতিটি গান শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে অনন্তকাল।
শাস্ত্রীয় সংগীতে অসামান্য অবদান রাখায় একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন রাশিদ খান। ২০০৬ সালে তিনি পদ্মশ্রী, পাশাপাশি ‘সংগীত নাটক আকাদেমি’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
তারপর ২০১২ সালে বঙ্গভূষণ পুরস্কার, ২০১০ সালে গ্লোবাল ইন্ডিয়ান মিউজিক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস, ২০১২ সালে মহাসংগীত সম্মান পুরস্কার, ২০১৩ সালে মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস, এবং ২০২২ সালে শিল্পকলার ক্ষেত্রে ভারত সরকার কর্তৃক ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণে ভূষিত হন রাশিদ খান।
এমএমএফ/এএসএম