চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতাল

জুলাই আহতদের পুনর্বাসন ও হাসপাতাল ত্যাগের দাবি চিকিৎসক-নার্সদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৪২ এএম, ১২ জুন ২০২৫
চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীরা

• ৮ দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর চিকিৎসক-নার্সদের স্মারকলিপি 
• আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের পুনর্বাসন ও আবাসনের দাবি
• চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, এমন রোগীদের হাসপাতাল ছাড়তে হবে
• চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি 
• হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিরাপত্তা সংকট এবং সংকট উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আন্তরিক অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে জুলাই আহতদের পুনর্বাসন, যেসব রোগীর আর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ নিশ্চিত করাসহ আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) হাসপাতাল বন্ধের ১৬তম দিনে স্বল্প পরিসরে আউটডোর সেবা চালু করা হয়। এর পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একসঙ্গে সভায় বসেন। পরে তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জুলাই আহতদের পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন। তার একটি অনুলিপি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স , কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত ‘জুলাই আন্দোলন’-এ আহত সব রোগীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও মানবিক বিবেচনায় উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বর্তমানে আমাদের হাসপাতাল এক চরম নিরাপত্তা সংকট ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এতে আরও বলা হয়, চিকিৎসার প্রয়োজন শেষ হওয়া সত্ত্বেও কিছু রোগী প্রায় ১০ মাস যাবৎ অপ্রয়োজনে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তারা হাসপাতালের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উশৃঙ্খল আচরণ, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের গালিগালাজ, শারীরিক আক্রমণ, এমনকি হাসপাতাল পরিচালকের ওপর হামলা ও আগুন লাগানোর হুমকিসহ নানাবিধ সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন।

এতে দাবি করা হয়, তাদের দখলে থাকা সিটগুলো প্রকৃত দরিদ্র ও জরুরি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশনে তারা প্রভাব বিস্তার এবং ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

৮ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি চিকিৎসক-নার্সদের

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তারা (জুলাই আহত) পরিচালক স্যারকে আটকে রাখেন এবং গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিতে চেষ্টা করেন। সর্বশেষ সশস্ত্র আক্রমণ করে অনেক চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গুরুতর আহত করে, হাসপাতালের অনেক স্থাপনার ক্ষতি করেন তারা। সংকট সমাধান এবং পরবর্তী চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কতৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড ৪ জুন হাসপাতালে আহত রোগীদের দেখতে আসেন। ৫৫ জন আহতের মধ্যে মাত্র ৩০ জন মেডিকেল বোর্ডে উপস্থিত হন এবং তাদের কারোরই হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই বলে মেডিকেল বোর্ড মতামত দেয়। কিন্তু ছুটি দেওয়া সত্ত্বেও তারা হাসপাতাল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং আবারও চিকিৎসকদের অবরুদ্ধ করেন।

আরও পড়ুন

এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সুষ্ঠু চিকিৎসার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স , কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা-

বিজ্ঞাপন

১. আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের পূর্ণ পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. যেসব রোগীর আর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. তাদের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়/সিএমএইচ/ ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৪. অনাবশ্যক রোগী ভর্তি প্রতিরোধে একটি কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫. দুষ্কৃতকারীদের হামলায় আহত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

৮ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি চিকিৎসক-নার্সদের

বিজ্ঞাপন

৬. হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. আহতদের সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপযুক্ত স্বীকৃতি দিতে হবে।

৮. ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একটি দিনের জন্য বন্ধ থাকবে এটি কোনভাবেই কারো কাম্য নয়। আমরা বিশ্বাস করি, অবিলম্বে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো না নিলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) সুদৃষ্টি ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

স্মারকলিপির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অপথ্যালমোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ ( ওএসবি) এর আহ্বায়ক/ সদস্য সচিবকেও দেওয়া হয়।

এসইউজে/এএমএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।