দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
রোবোট্যাক্সি দেখিয়ে দিচ্ছে প্রযুক্তির দৌড়ে ইউরোপ কতটা পিছিয়ে
প্যারিসের আর্ক দে ত্রিয়মফ ঘিরে আট লেনের বিশৃঙ্খল চক্কর। সিগন্যাল নেই, নিয়ম নেই, তবু শত শত চালক কোনোমতে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যান। যখন মানুষ এভাবে কষ্ট করে গাড়ি চালায়, তখন মেশিনের কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে আমেরিকা ও চীনে। সেখানকার শহরগুলোতে রোবোট্যাক্সি এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা। শুধু সান ফ্রান্সিসকোতেই যাত্রী পরিবহনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এখন চালকবিহীন ট্যাক্সিতে হচ্ছে। চীনের উহান ও সাংহাইয়ে বছরে লাখ লাখ মানুষ নিরাপদে রোবোট্যাক্সিতে যাতায়াত করছেন।
কিন্তু ইউরোপের চিত্র ভিন্ন। ওয়ারশ বা রোমে এখনো এই প্রযুক্তি পরীক্ষামূলক পর্যায়েও পৌঁছায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে—রোবোট্যাক্সির অভাব কি ইউরোপবাসীর কাছে স্পষ্ট করে দেবে যে, প্রযুক্তিতে তারা কতটা পিছিয়ে পড়েছে?
আরও পড়ুন>>
- ইলন মাস্কের টেসলার সামনে মহাবিপদ!
- অ্যাপল যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই শাওমির চমক
- ইলন মাস্কের টেসলাকে ছাড়িয়ে গেলো চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি
বারবার পিছিয়ে পড়া মহাদেশ
আইফোন থেকে শুরু করে টিকটক, চিপ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—ভোক্তাদের আকৃষ্ট করা প্রায় সব নতুন প্রযুক্তিই আসে চীন বা আমেরিকা থেকে। ইউরোপে তা ব্যবহার করা গেলেও নিজস্ব উদ্ভাবন খুব কম। কিন্তু চালকবিহীন গাড়ি আলাদা। কারণ এটি শুধু বিদেশে তৈরি নয়—ইউরোপে আপাতত পাওয়াও যাচ্ছে না।
বিনিয়োগ ও কাঠামোগত দুর্বলতা
রোবোট্যাক্সি চালু করতে এরই মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা বহন করেছে গুগলের মতো ট্রিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি জায়ান্ট বা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে আগ্রহী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। ইউরোপে নেই এ ধরনের বড় টেক প্রতিষ্ঠান বা যথেষ্ট ঝুঁকি নিতে সক্ষম বিনিয়োগ ব্যবস্থা।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খণ্ডিত একক বাজার। ইউরোপের বড় গাড়ি নির্মাতারা বিদ্যমান গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার শঙ্কায় পুরোপুরি চালকবিহীন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পিছপা। বরং তারা বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়িতে, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করার ইইউ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
বিদেশি প্রযুক্তি নির্ভরতা
ইউরোপ যদি বিদেশ থেকে রোবোট্যাক্সি আমদানি করতে চায়, তবে তা রাজনৈতিক দ্বিধার মুখে পড়বে। ইউরোপীয় কমিশন এরই মধ্যে ‘প্রযুক্তিগত সার্বভৌমত্ব’ রক্ষার পদ তৈরি করেছে। কারণ, চালকবিহীন গাড়ি কেবল যানবাহন নয়, বরং তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমও—যা বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এছাড়া বিদেশি টেক কোম্পানির আধিপত্য ইউরোপের বৃহৎ গাড়ি শিল্পকে দুর্বল করতে পারে। এ কারণে নীতিনির্ধারকেরা মার্কিন ও চীনা কোম্পানির গতিতে লাগাম টানার চেষ্টা করছেন, যেমনটি সম্প্রতি চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে হয়েছে।
স্পুটনিক মুহূর্তের অপেক্ষা
ইউরোপীয় নাগরিকরা বিদেশ ভ্রমণে রোবোট্যাক্সির অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলে স্পষ্টই বুঝতে পারবেন, তারা কতটা পিছিয়ে রয়েছেন। ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আমেরিকার জনগণকে চমকে দিয়েছিল—তখনই তৈরি হয়েছিল ‘স্পুটনিক মুহূর্ত’।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রোবোট্যাক্সি ইউরোপের জন্য সেই ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে, যা নাড়া দেবে নীতিনির্ধারকদের।
কেএএ/