এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে পর্তুগাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫০ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে পর্তুগাল/ ছবি: এএফপি (ফাইল)

এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পর্তুগাল। এর আগে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আগে আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে পর্তুগালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরার।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এর একদিন পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করছে যে পর্তুগাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর রোববার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যম কোরিও দা মানহা জানিয়েছে, ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রো এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। প্রায় ১৫ বছরের দীর্ঘ বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে এই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। ২০১১ সালে প্রথম বামপন্থি দল লেফট ব্লক সংসদে এই প্রস্তাব তোলে।

বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
পর্তুগালের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন জাতিসংঘের এক ঐতিহাসিক তদন্তে বলা হয়েছে-গাজায় ইসরায়েলের হামলা গণহত্যার শামিল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ১৪১ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৫ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে পর্তুগাল প্রথমবার জানায় যে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। দেশটি তখন বলেছিল, গাজায় যুদ্ধের ভয়াবহতা, মানবিক বিপর্যয় এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের হুমকি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে মূল কারণ।

শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এক উপদেষ্টা জানান, আন্দোরা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও সান মারিনোও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সোমবার নিউইয়র্কে সৌদি আরবের সঙ্গে ফ্রান্স যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করছে, সেখানে তারা একসঙ্গে ঘোষণা দেবে।

এছাড়া কানাডা ও যুক্তরাজ্যও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি জাতিসংঘের মোট সদস্য দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ।

পর্তুগাল শুক্রবার জাতিসংঘে এমন একটি প্রস্তাবের পক্ষেও ভোট দিয়েছে যেখানে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কের সাধারণ পরিষদে ভিডিও বার্তা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নাউরু, পলাউ, প্যারাগুয়ে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে এবং ছয়টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই স্বীকৃতির তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্ত ‘বেপরোয়া পদক্ষেপ’ যা ‘শুধু হামাসের প্রচারণাকে শক্তিশালী করবে।’

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যে কোনো দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে পশ্চিম তীরে নতুন একটি অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করা হবে।

লুক্সেমবার্গের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা
লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল জানিয়েছেন, তারাও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বেটেল আরও বলেছেন, তিনি সংসদে একটি বিল তুলবেন যাতে প্রয়োজনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যায়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ যুদ্ধ থামাতে আরও কার্যকর ব্যবস্থা যেমন- ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বিভিন্ন দেশকে আহ্বান জানিয়েছেন।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।