লাদাখে ক্ষোভের আগুন, মোদী সরকারের জন্য কতটা চিন্তার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: এএফপি

পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল লাদাখে আন্দোলরত পরিবেশকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুককে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, লাদাখের বেশ কিছু এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে এবং রাজধানী লেহ শহরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরো পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চাপে আছে মোদী সরকার। 

গত বুধবার তরুণদের বিক্ষোভ-আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে এবং এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ, যাদের একটা বড় অংশই পুলিশ সদস্য।

তরুণদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে লাদাখ অ্যাপেক্স বডি এবং কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স নামের দুটি সংগঠন। তবে আন্দোলনের মুখ হিসাবে ছিলেন ‌‘থ্রি ইডিয়েটস’ ছবির সূত্রে বহুল পরিচিত পরিবেশকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক।

কারগিল মুসলিম প্রধান অঞ্চল আর লাদাখে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার দাবির পাশাপাশি যে ষষ্ঠ তফশিল অনুযায়ী রক্ষাকবচের দাবি জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা, ওই তফশিল অনুযায়ী আদিবাসীদের অধিকার, তাদের পরিচয় এবং তাদের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা হয়।

লাদাখ অ্যাপেক্স বডি গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের দাবি নিয়ে অনশন আন্দোলন শুরু করেছিল। সোনম ওয়াংচুকও ওই অনশনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে বুধবারের সহিংসতার পর ওয়াংচুক বিবিসিকে জানান যে, অনশন প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

লাদাখ নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত
ভারতীয় সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রাক্তন কমান্ডার ইন-চিফ অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল দীপেন্দ্র হুডা বলছিলেন, লাদাখের মানুষের দাবিগুলো খুবই সংবেদনশীল হয়ে শোনা উচিত।

তিনি বলেন, লাদাখকে যখন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হলো তখন সেখানকার মানুষ বিষয়টাকে খুব ইতিবাচক ভাবেই নিয়েছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের মনে হতে থাকে যে তাদের অধিকার সুরক্ষিত হচ্ছে না। তাদের কাজের সুযোগ বাইরের মানুষ নিয়ে নিচ্ছেন, সংস্কৃতির ওপরে আঘাত আসছে। আমার মনে হয় লাদাখের মানুষের দাবিগুলো ভুল নয়, কিন্তু দাবি আদায়ের পথ তো সহিংস হতে পারে না।

লাদাখ ভারতের কাছে কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ চীন আর পাকিস্তান দুই দেশেরই সীমানা জুড়ে আছে লাদাখের সঙ্গে। চীনের সঙ্গে সীমান্তে গত কয়েক বছর ধরেই উত্তেজনা চলছে আবার পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা তো আছেই। ভারতের নিরাপত্তার জন্য লাদাখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

কীভাবে সহিংস হয়ে উঠল আন্দোলন?
শুক্রবার গ্রেফতার হওয়ার আগে বিবিসিকে দীর্ঘ সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন সোনাম ওয়াংচুক। তিনি বলেছিলেন, এই আন্দোলনে বড় সংখ্যায় তরুণ-তরুণীরা অংশ নিচ্ছেন। যুব-সমাজের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল। তাদের মনে হচ্ছিল যে এতজন মানুষ অনশন করছেন, কিন্তু সরকার ৬ অক্টোবর আলোচনার তারিখ দিচ্ছে। এটাই তাদের ক্ষিপ্ত করে তোলে।

কিন্তু পুলিশের কিছুটা ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। তারা শরীরের এমন জায়গা লক্ষ্য করে গুলি না চালাতে পারত যাতে প্রাণ চলে যায়। শুরুর দিকে পুলিশের কোকো ভুল ছিল না, কিন্তু পরে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালায় পুলিশ।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য ওয়াংচুককেই এই সহিংসতার জন্য দায়ী করেছে। তার উসকানিমূলক ভাষণের জন্যই জনতা ক্ষেপে গিয়ে সহিংসতা শুরু করে বলে উল্লেখ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলছে যে, সহিংসতা শুরু হওয়ার পরেই অনশন আন্দোলন শেষ করে দিয়ে ওয়াংচুক অ্যাম্বুলেন্সে চেপে নিজের গ্রামে চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি কোনো চেষ্টাই করেননি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।