দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
গাজায় চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন ট্রাম্প?
গাজার জন্য যৌথভাবে একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউজ থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি একে ‘সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম সেরা দিন’ হিসেবে আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, এই উদ্যোগ ‘চিরস্থায়ী শান্তির’ পথ তৈরি করতে পারবে। অতিরঞ্জন বাদ দিলেও এটি গাজায় চলমান দুই বছরের যুদ্ধ শেষ করার ক্ষেত্রে এক বড় মাইলফলক। ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ওভাল অফিসে ডেকে এনে অবশেষে তাকে এমন এক যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত করান, যা আরব ও মুসলিম বিশ্বের অনেক নেতার সমর্থন পেয়েছে।
এই পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মি এবং জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দিতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ১ হাজার ৯৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে ২৫০ জন ইসরায়েলিদের হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। পরবর্তী ধাপে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন এবং একটি ‘নিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি কমিটি’র মাধ্যমে গাজার প্রশাসন পরিচালনার কথা রয়েছে। পুনর্গঠন তত্ত্বাবধান করবে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ‘বোর্ড অব পিস’ যেখানে টনি ব্লেয়ারের মতো নেতারাও থাকবেন।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো হামাস এই পরিকল্পনা মেনে নেবে কি না। জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছেড়ে দেওয়ার সমান। হামাস এরই মধ্যে দাবি করছে যে, তারা সবার অবস্থান জানে না। একই সঙ্গে তারা চায় ইসরায়েল যেন জিম্মিদের মুক্তির পর পুনরায় হামলা না চালায় তার নিশ্চয়তা। হামাস তার অস্ত্রসম্ভার ছেড়ে দিতে অনিচ্ছুক, কারণ এটাই তাদের ‘প্রতিরোধ আন্দোলন’-এর পরিচয়ের অংশ।
ইসরায়েলেও বড় বাধা রয়েছে। কাগজে-কলমে এ পরিকল্পনা ইসরায়েলের ঘোষিত যুদ্ধলক্ষ্য পূরণ করে হামাসকে ভেঙে দেওয়া এবং জিম্মিদের ফেরত আনা। কিন্তু নেতানিয়াহুর ডানপন্থি মিত্ররা গাজায় স্থায়ী দখল ও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের পক্ষে। নতুন পরিকল্পনায় আরব দেশগুলোর দাবিতে সংস্কার শেষে রামাল্লাহভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গাজায় প্রত্যাবর্তনের কথা রয়েছে, এমনকি ভবিষ্যৎ শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনার ইঙ্গিতও রয়েছে যা নেতানিয়াহু বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এখন এর ফল নির্ভর করবে চাপের মাত্রার ওপর। কাতার ও তুরস্ক হামাসকে পরিকল্পনা মানতে চাপ দেবে, তবে গাজার সামরিক কমান্ডাররা কতটা রাজি হবে তা অনিশ্চিত। ট্রাম্প বলেছেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তিনি হামাসকে ধ্বংসে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবেন। একই দিনে তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপ করিয়ে দেন, যেখানে নেতানিয়াহু দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের ব্যর্থ বিমান হামলার জন্য ক্ষমা চান।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অনেকাংশে ২০২৪ সালের মে মাসে জো বাইডেনের দেওয়া প্রস্তাব এবং চলতি বছরের শুরুতে ইসরায়েলের বাতিল করা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের মতো। তবে এবার ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি এগিয়ে এনেছেন এবং প্রকাশ্যে গাজা দখল না করার অঙ্গীকার করিয়েছেন। যদিও হামাস এই পরিকল্পনা মেনে নেবে কি না বা নেতানিয়াহু উগ্র মিত্রদের ছাড়তে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত। তবুও এটিই এখন পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে বড় সুযোগ তৈরি করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
টিটিএন