ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা/ ফাইল ছবি: এএফপি

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাস এ পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সমঝোতায় তৈরি এই পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি ও অন্তত দুই ডজন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া এবং এর বিনিময়ে শত শত বন্দি ফিলিস্তিনিকে মুক্তির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস গাজার শাসন থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকবে। এতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ আছে, যদিও নেতানিয়াহু পরবর্তীতে তা নাকচ করেছেন।

আরও পড়ুন>>
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন/ গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন ট্রাম্প?
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় নেতানিয়াহুর ‌সমর্থন
গাজায় শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা, হামাসকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একে ‘ঐতিহাসিক শান্তির দিন’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, হামাস পরিকল্পনা না মানলে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে ধ্বংস করার ব্যাপারে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।

নেতানিয়াহুও বলেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল ‘শেষ পর্যন্ত লড়বে’। পরে ভিডিওবার্তায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধী। যদিও পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে ধাপে ধাপে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ‘আন্তরিক ও দৃঢ়’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ওয়াফা’ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধের অবসান, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং বন্দি বিনিময়ে তারা কাজ চালিয়ে যাবে।

এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, এই চুক্তি ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ তৈরি করবে, যেখানে গাজা ও পশ্চিম তীর মিলিত হয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করবে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেন, নেতানিয়াহুর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাকে উৎসাহিত করেছে। তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে এ চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। হামাস এখনই অস্ত্র ফেলে সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে কষ্টের অবসান ঘটানো উচিত।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ফ্রান্স শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে প্রস্তুত। এই প্রক্রিয়া অবশ্যই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি একে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে সব পক্ষকে প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানান।

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা

নতুন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উভয় পক্ষের যুদ্ধ সীমারেখা স্থির থাকবে। হামাস অস্ত্র জমা দেবে, টানেল ও অস্ত্র তৈরির কারখানা ধ্বংস করা হবে। প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিলে ইসরায়েল ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেবে।

এছাড়া গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। গাজার শাসনকাজে একটি অরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ফিলিস্তিনি কমিটি কাজ চালাবে, যার ওপর তত্ত্বাবধান করবে নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’। এর নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও এতে যুক্ত থাকবেন।

পরিকল্পনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, হামাস কোনোভাবেই গাজার শাসনে অংশ নিতে পারবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্র ‘গাজাকে পুনর্গঠনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ হাতে নেবে। এতে আরও উল্লেখ রয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না, বরং ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করবে।

আগের অবস্থানের বিপরীতে এবার ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না। বরং তাদের সেখানে থেকেই গাজা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে।

দোহায় হামাস নেতাদের কাছে কাতার ও মিশরের কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউজের এই পরিকল্পনা হস্তান্তর করেছেন। এক ফিলিস্তিনি সূত্র জানায়, হামাস এখনো প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখছে। তবে তারা বলছে, যে কোনো সমঝোতায় অবশ্যই ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণভাবে গাজা থেকে সরে যাবে এবং ফিলিস্তিনি স্বার্থ রক্ষা হবে।

সূত্র: বিবিসি
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।