আত্মঘাতী বোমা হামলার পর ইসলামাবাদে কঠোর নিরাপত্তা, সতর্ক পাকিস্তান সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০২৫
ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলার একদিন পর বুধবার (১২ নভেম্বর) লাহোরের একটি চেকপয়েন্টে একটি গাড়ি তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা/ ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর বুধবার (১২ নভেম্বর) শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার ও প্রশাসন। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) জেলা আদালতের বাইরে ওই বিস্ফোরণে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে, যার পর দেশজুড়ে ভয়াবহ হামলার প্রবণতা রোধে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার।

মঙ্গলবারের ওই প্রাণঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি, যা তালেবানের একটি উপদল। গত তিন বছরে রাজধানীতে এটাই ছিল প্রথম আত্মঘাতী হামলা।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বুধবার (১২ নভেম্বর) ইসলামাবাদের জেলা আদালত বন্ধ রাখা হয়, পাশাপাশি শহরের অন্য আদালত ভবনগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিভিন্ন চেকপোস্টে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে।

৫৮ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা ফজল সাতার বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে। তারপরও এই হামলাগুলো কোথা থেকে আসছে ও কীভাবে ঘটছে?

এই বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত ও ২৭ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ৪২ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরান, যিনি বলেন, এটা ছিল একদম হঠাৎ বিস্ফোরণ। মনে হলো, কেউ যেন আমাকে মাটিতে ছুড়ে ফেলেছে।

২৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী শরজিল আহমেদ বলেন, আমার মনে হয় এটা গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটি। আমাদের এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যদি এমন ঘটনা চলতে থাকে, বিশ্ব কীভাবে আমাদের বিশ্বাস করবে? বিদেশি বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজন, সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হামলার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি নিরাপত্তা বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়, দুই নেতা একযোগে ঘোষণা করেছেন যে, বিদেশি সমর্থিত সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে, যতক্ষণ না সন্ত্রাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়।

ইসলামাবাদ বহুদিন ধরে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে পাকিস্তানি তালেবানকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। তবে কাবুল সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আফগান তালেবান সরকার ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলা ও আফগান সীমান্তের কাছে ওয়ানার সামরিক কলেজে হামলার ঘটনায় ‘গভীর শোক ও নিন্দা’ প্রকাশ করেছে।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, ওয়ানার ক্যাডেট কলেজে হামলার পর সেনা অভিযানে পাঁচজন জঙ্গি নিহত হয় ও সব শিক্ষার্থীকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।

পাকিস্তানি তালেবান বা টিটিপি মূলত আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সক্রিয়। আফগানিস্তানে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে ও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কও তীব্রভাবে অবনতি হয়েছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত মাসে দুই দেশের মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই আফগান বেসামরিক নাগরিক।

পাকিস্তানে টিটিপি ঘোষণা দিয়েছে যে, ইসলামি আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তাদের হামলা চলবে।

সূত্র: এএফপি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।