খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিকের ব্যবহার
বিশ্বব্যাপী মারাত্মক হুমকিতে মানবস্বাস্থ্য, বাড়ছে বন্ধ্যাত্ব
বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য। এসব রাসায়নিক মানবস্বাস্থ্য ও বৈশ্বিক কৃষি ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে। এসব রাসায়নিক ব্যবহারে হতে পারে ক্যানসার, নিউরোডেভেলপমেন্টাল ক্ষতি ,স্থূলতা ও ডায়াবেটিস। এছাড়া হরমোনজনিত (এন্ডোক্রাইন) সমস্যা বিশেষত বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টিতে প্রভাব রাখছে এসব দ্রব্য।
রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি ও রোগব্যয় বছরে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ( দুই লাখ সত্তর হাজার কোটি টাকা) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পাশাপাশি ২১ শতকে বিশ্বব্যাপী শিশু জন্মহার ব্যাপকভাবে কমবে।
গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ হেলথ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, কেমসেকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা। নেতৃত্ব দিয়েছেন সিস্টেমিক নামের একটি সংস্থার মূল গবেষক দল, যারা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) গবেষণার তথ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফথালেটস (প্লাস্টিককে নরম, নমনীয় ও টেকসই এবং খাদ্য প্যাকেজিং করতে ব্যবহৃত রাসায়নিক), বিশফেনলস ( প্লাস্টিক ও রেজিন তৈরির একটি প্রধান রাসায়নিক), পেস্টিসাইডস (কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড়, আগাছা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত রাসায়নিক) এবং পিফাস ‘ফরেভার কেমিক্যালস’–এর কারণে বিশ্বের খাদ্যদ্রব্য বিষে পরিণত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বিশ্বে বর্তমান মাত্রায় এসব রাসায়নিকের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে ২০২৫ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে ২০ থেকে ৭০ কোটি নব শিশুর জন্ম কমে যাবে।
গবেষণা বলছে, এসব রাসায়নিক শুধু রোগই বাড়াচ্ছে না বরং পরিবেশ ও কৃষির ওপরও ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনছে। কৃষিতে উৎপাদনহানি এবং পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিফাস ও কীটনাশকের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াতে পারে আরও ৬৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বে রাসায়নিক উৎপাদন ২০০ গুণ বেড়েছে এবং বর্তমানে বাজারে ৩.৫ লাখের বেশি সিন্থেটিক রাসায়নিক ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের মধ্যে খুব অল্প কিছু রাসায়নিকের ঝুঁকি নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে, বাকিগুলোর প্রভাব এখনো অজানা।
বিশ্বখ্যাত শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ড. ফিলিপ ল্যানড্রিগান এ পরিস্থিতিকে ‘ওয়েক-আপ কল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকে রাসায়নিক দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের মতোই বড় হুমকি। শিশুদের বিকাশমান মস্তিষ্কে এসব রাসায়নিক ভয়াবহ ক্ষতি করে— বুদ্ধিমত্তা কমায়, সৃজনশীলতা কমায়, আজীবন উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়।’
কেএম