ভারতে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন ইব্রাহিম
ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন ভারতের বন্দরনগরী কোচির এক মুসলিম। ইহুদি পাড়া নামে পরিচিত কোচির জিউ টাউন এলাকায় একটি ছোট্ট দোকানের মালিক ৫৫ বছর বয়সি থাহা ইব্রাহিম। সরু পাথুরে গলির ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে সুঁই-সুতো নিয়ে কিপ্পা (ইহুদিদের ঐতিহ্যবাহী মাথার টুপি) সেলাই করছেন তাহা।
কয়েক দশক আগেও এই রাস্তায় প্রতিটি ঘরেই বাস করতো ইহুদি পরিবার। তখন এলাকাটি পরিচিত ছিল ইহুদি পাড়া হিসেবে। আজ সেই জিউ টাউনে ইহুদি পরিবার সংখ্যা কমে গেলেও রয়ে গেছে একটি দোকান আর তার দেখভাল করছেন একজন মুসলিম ব্যক্তি। থাহা ২০০০ সাল থেকে এই দোকান পরিচালনা করে আসছেন।
জানা গেছে, এই দোকানটির মালিক ছিলেন সারা কোহেন নামে এক ইহুদি মহিলা। ২০১৯ সালে সারাহ কোহেন ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দোকানটির দায়িত্ব নেন তাহা ইব্রাহিম। সারাহ কোহেনের পূর্বপুরুষরা শত শত বছর আগে কোচিতে বসতি স্থাপন করেছিলেন। একসময় বিশ্বব্যাপী মশলা বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র কোচি শহর ‘আরব সাগরের রানি’ নামে পরিচিত ছিল।
থাহা ইব্রাহিমের সঙ্গে কোহেন পরিবারের পরিচয় ঘটে আশির দশকের শুরুতে। তখন ১৩ বছর বয়সে থাহা পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেসময় তার সেলাই কাজে পারদর্শিতা দেখে অবাক হন সারাহ। এরপর চার দশক ধরে থাহাকে নিজের দোকানে রেখেছেন সারাহ কোহেন। ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন আর্থসামাজিক পটভূমি সত্ত্বেও একজন মুসলিম ও একজন ইহুদি নারী প্রায় চার দশক ধরে এ দোকানটি চালিয়ে গেছেন।
সারাহ কোহেন মারা যাওয়ার সময় দোকানটি থাহার নামে লিখে দিয়ে যান। সারাহ কোহেনের মৃত্যুর সময় থাহা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি জিউ টাউনের স্মৃতি ও কোচির ইহুদি ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন।
এখন কোচির জিউ টাউনে ইহুদি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে এলেও থাহা ইব্রাহিমের হাত ধরে টিকে আছে সেই প্রাচীন ইতিহাস, বন্ধুত্ব ও সহাবস্থানের এক অনন্য অধ্যায়।
সূত্র : আল-জাজিরা
কেএম