হায়দরাবাদ থেকে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন বন্ডাই বিচের হামলাকারী
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলা চালানো বন্দুকধারী মূলত বহু বছর আগে ভারত থেকে দেশটিতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনের মধ্যে একজন ভারতের দক্ষিণাঞ্চল থেকে এসেছেন। তবে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ খুবই কম ছিল।
এদিকে রবিবারের ওই গুলির ঘটনায় নিহতদের প্রথম শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরু হয়েছে। ওই ঘটনায় মোট ১৫ জন নিহত হয়েছে এবং আহত আরও ২১ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হামলাকারীদের একজন সাজিদ আকরাম (৫০)। তিনি রোববার সিডনিতে হামলার সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তিনি প্রায় ২৭ বছর আগে ভারতের হায়দরাবাদ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন। ভারতীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর থেকে তিনি এ পর্যন্ত মাত্র ছয়বার ভারতে আসা যাওয়া করেছেন। তার পরিবারের ‘তার উগ্রবাদী চিন্তাধারা বা কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই’ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সাজিদ এবং তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ ১৫ জনকে হত্যা এবং আরও কয়েক ডজন হত্যা চেষ্টার ঘটনায় পুলিশের কাছে সন্দেহভাজন।
ওই ঘটনার পর পুলিশ বলেছিল, বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকাহ উদযাপন শুরু উপলক্ষে চলা অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয় এবং তারা এটাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে।
তেলেঙ্গানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিবিসি তেলেগু সার্ভিসকে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের পর সাজিদ ছয়বার ভারত সফরে এসেছিলেন। প্রাথমিকভাবে সম্পত্তি সংক্রান্ত ও বয়স্ক বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার মতো পারিবারিক কারণে তিনি এসেছিলেন।
তবে তিনি তার বাবার মৃত্যুর সময়ও ভারতের আসেননি বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। সাজিদ আকরাম ও তার ছেলে কী কারণে উগ্রপন্থায় জড়িয়েছেন তার সঙ্গে ভারত কিংবা তেলেঙ্গানার স্থানীয় কোনো বিষয়ের যোগসূত্র নেই।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাজিদ আকরামের ভারতে অপরাধ সংঘটনের কোনো রেকর্ড নেই। তিনি তার ডিগ্রি শেষ করার পর কাজের সন্ধানে অস্ট্রেলিয়ায় যান এবং পরে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত এক নারীকে বিয়ে করেন।
সাজিদ আকরাম ভারতীয় পাসপোর্টধারী ছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়ায় তার সন্তানরা অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টধারী ও দেশটির নাগরিক। পুলিশ এখন অনুসন্ধান করে দেখছে যে কেন তারা বাবা-ছেলে বন্ডাই বিচে হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে ফিলিপাইনে গিয়েছিলেন।
দেশটির ইমিগ্রেশন ব্যুরো বিবিসিকে বলেছে, তারা গত ১ নভেম্বর সেখানে পৌঁছান এবং ২৮ নভেম্বর দেশটি থেকে চলে আসেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভ্রমণে সাজিদ ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে তার ছেলে ব্যবহার করেছেন অস্ট্রেলিয়ান পরিচিতি।
নিরাপত্তা সূত্রকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন এবিসি জানিয়েছে, সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ’ নেওয়ার জন্য ওই দুজন দ্বীপরাষ্ট্রটিতে গিয়েছিলেন। তবে এই রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত করেননি কর্মকর্তারা।
এদিকে ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া থেরেসা লাজারো ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি অং বন্ডাই বিচে গুলির ঘটনার তদন্তের বিষয়ে পারস্পারিক তথ্য বিনিময়ে একমত হয়েছেন। লাজারো সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বার্তায় এমনটি জানিয়েছেন।
এবিসি বলছে, নাভিদ আকরাম এর আগে সিডনিভিত্তিক একটি টেররিজম সেলের সঙ্গে যোগসূত্রতার বিষয়ে তদন্তের আওতায় এসেছিলেন। চরমপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী আইএস ২০১৫ সালে প্যারিস হামলাসহ ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে অনেকগুলো সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, নাভিদ আকরাম অন্যদের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার ভিত্তিতে ২০১৯ সালে প্রথম কর্তৃপক্ষের নজরে আসেন। তবে সে সময় যে পর্যালোচনা করা হয়েছিল তাতে কোনো হুমকি বা সহিংসতায় তার জড়িত হাবার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
টিটিএন