রাশিয়ার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে ভারতে
সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা যখন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তখন করোনার ভ্যাকসিন এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল রাশিয়া। যদিও স্পুটনিক-৫ নামের ওই ভ্যাকসিনটি নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েই গেছে।
এদিকে, বিশ্বজুড়ে বিতর্কিত এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। স্পুটনিকের বিপণনের দায়িত্বে থাকা রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড এবং ভারতের ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরিস লিমিটেড এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন পেয়েছে। সংস্থা দু'টি জানিয়েছে, ভারতে বিশাল আকারে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে।
স্পুটনিক-৫ নামের ওই ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক দেশের বিজ্ঞানীই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওই ভ্যাকসিন নিয়ে মূল্যায়নের মতো পর্যাপ্ত তথ্য পায়নি বলেও জানিয়েছে। মানবদেহে পরীক্ষার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা জানতে শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও চলমান। তার আগেই রাশিয়ার জনগণের মাঝে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের অনুমতি দেয়ায় সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ১১ আগস্ট রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্বে প্রথম হিসেবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ এর অনুমোদন দেয়।
এদিকে, ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) পক্ষ থেকে ভারতে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
প্রথম দফায় ডিসিজিআই-এর পক্ষ থেকে এই ট্রায়ালের অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হলেও গত ১৩ অক্টোবর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার ট্রায়ালের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
পরবর্তীতে সবকিছু বিবেচনা করে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড গত মাসেই ঘোষণা করেছিল যে, ডক্টর রেড্ডি'স ল্যাবকে ১০ কোটি স্পুটনিক ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
তবে রাশিয়া তাদের এই ভ্যাকসিন নিয়ে বেশ আশাবাদী। গত ১১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সরকারি এক বৈঠকে পুতিন বলেন, গ্যামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরিকৃত এই ভ্যাকসিনটি নিরাপদ। আমি জানি, এটা বেশ কার্যকরভাবেই কাজ করে এবং শক্তিশালী ইমিউনিটি গড়ে তোলে। আমি আবারও বলছি- প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা উতড়ে গেছে এই ভ্যাকসিন।
বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষরা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় সুরক্ষার বিষয়ে কোনও ধরনের আপোষ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ধরনের ভ্যাকসিন উৎপাদনের পেছনে রাশিয়ার সরকারের প্রতি জনগণের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস এবং আস্থাহীনতা কাজ করছে বলে সম্প্রতি কিছু জরিপে দেখা গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তা বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব চললেও এখন পর্যন্ত রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনও দেশ এর ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত ১৭৬টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁঁছেছে।
চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে করোনার অন্যান্য ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন।
টিটিএন