অবৈধ বাংলাদেশিদের তথ্য জানতে চেয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে কত সংখ্যক অনিবন্ধিত অভিবাসী প্রবেশ করেছে ও বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোতে এই সমস্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা এখনকার বাংলাদেশ থেকে ঠিক কী পরিমাণ অভিবাসী আসামে গেছে, তাদের কতজনকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা বাদ পড়েছে তাদেরই বা কী হয়েছে, আসামে বাংলাদেশিদের নিয়ে এত আপত্তি অথচ পশ্চিমবঙ্গে তা কেন হয়নি- এই প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন: কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো ইন্দো-বাংলা নোয়াখালী উৎসব

জানা গেছে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ১৯৮৫ সালে সংযোজিত ৬ (এ) ধারা নিয়ে শুনানি চলছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক এ বেঞ্চে। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) শুনানিতে ভারতে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশি অভিবাসীদের সম্পর্কে আসাম রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের প্রতি কিছু প্রশ্ন রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।

নাগরিকত্ব আইনের ৬ (এ) ধারাটি সংযোজিত হয়েছিল ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে। ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বেআইনিভাবে আসামে প্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দেওয়া জন্য ধারাটি সংযোজন করা হয়। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসাম বরাবরই ভিনদেশি প্রবেশবিরোধী। মামলাকারীদের অভিযোগ, এই ধারাটির ফলে আসামে বেআইনিভাবে প্রবেশকারীদের নিয়ে সমস্যা জটিল হয়েছে।

আরও পড়ুন: মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো ভারত

শুনানিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, ১ জানুয়ারি ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে প্রবেশকারী ঠিক কতজনকে ৬ (এ) (২) ধারায় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে? ওই সময়সীমা মাথায় রেখে কতজনকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে? সার্বিকভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের চিত্রটা কী?

তাছাড়া ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর প্রবেশকারীদের বিষয় বিবেচনায় কতগুলো ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল গড়া হয়েছে, কত মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, কত মামলা জমে রয়েছে, এক-একটি মামলা নিষ্পত্তিতে কত সময় লাগে, গুয়াহাটি হাইকোর্টে কতটি আপিল পড়ে রয়েছে- এমন সব প্রশ্নের উত্তোর জানতে চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি ভারত সরকারের সঙ্গে আসাম সরকারকেও এ বিষয়ে হলফনামা পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন: পার্লামেন্টে হামলার হুমকি, দিল্লিজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা

এদিন শুনানিতেই ভারতের প্রধান বিচারপতি আরও একটি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন, কেন বাংলাদেশের (পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তান) সঙ্গে বিস্তৃততর সীমানার পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বিবেচনায় না এনেই শুধু আসামের ক্ষেত্রে ধারাটি সংযোজন করা হলো?

প্রসঙ্গত, আন্দোলনের উত্তাল পরিস্থিতিতে শান্তি স্থাপনে ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধী সরকারের আমলে আসাম চুক্তি সম্পাদিত হয়। সেই সূত্রেই ঘটে ৬ (এ) ধারার সংযোজন।

২০১৪ সালেই ধারাটি নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অনেক প্রশ্ন তুলেছিল। ওই ধারার কারণে আসামবাসীর অধিকারহানি হচ্ছে কি না, চিরাচরিত সংস্কৃতি সংরক্ষণে বিপদ ঘনাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নও ছিল। ২০১৫-তেই মামলাটি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হয়। সেটির শুনানি শুরু হলো ২০২৩ সালের শেষ মাসে।

আরও পড়ুন: কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার তৃতীয় দিনে ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপিত

আসামে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে ২০১৮ সালে শুরু এনআরসি বা ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব ইন্ডিয়ান সিটিজেনস। সে সময় সেই তালিকা থেকে প্রায় ২০ লাখ নাগরিক এই তালিকার বাইরে পড়ে যায়।

পরে বিষয়টি সামাল দিতে পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ, যার ফলে শর্ত সাপেক্ষে যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছে, তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।