যেভাবে শুরু হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবসের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে আপনি হয়তো অনেক আলোচনা শুনে থাকবেন অথবা এ নিয়ে নানান খবরাখবরও দেখে থাকবেন গণমাধ্যমে। কিন্তু এই দিনটা আসলে কী জন্য? বিশ্বজুড়ে কীভাবে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে? চলুন জানা যাক।

দিবসটির শুরু কীভাবে?

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুরুটা হয় শ্রমিক আন্দোলন থেকে, যা একসময় জাতিসংঘ স্বীকৃত বাৎসরিক দিবস হয়ে উঠে। আর এসব কিছুর শুরুটা হয় ১৯০৮ সালে, যখন একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার নারী যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমে আসেন কর্মঘন্টা কমানো, বেতন বৃদ্ধি ও ভোটের অধিকারের দাবিতে।

এর এক বছর পর সোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা প্রথম জাতীয় নারী দিবসের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে এই দিবসকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের চিন্তাটা মাথায় আসে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবী ও সমাজতান্ত্রিক কর্মী ক্লারা জেটকিনের।

ক্লারা জেটকিন ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা করেনক্লারা জেটকিন ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা করেন/ ছবি: সংগৃহীত

তিনি তার এই চিন্তাটা জানান ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে নারী শ্রমিকদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। সেখানে ১৭টি দেশের ১০০ জন নারী উপস্থিত ছিলেন ও তারা সর্বসম্মতিক্রমে তার এই প্রস্তাব মেনে নেন।

তবে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইটজারল্যান্ডে। আর এই দিবসের শতবর্ষ উদযাপিত হয় ২০১১ সালে।

এই দিবসের সবকিছু আনুষ্ঠানিক রূপ পায় ১৯৭৫ সালে, যখন জাতিসংঘ এটা উদযাপন করতে শুরু করে। আর প্রথমবার এই দিবসের একটা প্রতিপাদ্য ঠিক হয় ১৯৯৬ সালে। জাতিসংঘ সেবার দিবসটি পালন করে ‘অতীতের উদযাপন, ভবিষ্যত ঘিরে পরিকল্পনা’ স্লোগান নিয়ে।

প্রতি বছর এখন এই দিবসে উঠে আসে নারীরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে কতোটা এগিয়েছে সেই বিষয়টা। একই সঙ্গে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে রাজনৈতিকভাবে নানা আন্দোলন ও প্রতিবাদেরও আয়োজন করা হয় এ দিনটি ঘিরে।

৮ মার্চ কেন?

ক্লারা জেটকিন যখন এই দিনটি প্রস্তাব করেন তখন তিনি কোনো নির্দিষ্ট তারিখের কথা বলেননি। ১৯১৭ সালের আগ পর্যন্ত এই তারিখটিও নির্দিষ্ট ছিল না। সেবার যুদ্ধের সময় রাশিয়ান নারীরা ‘খাবার ও শান্তি’র দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। টানা চার দিন ধরে চলা সেই আন্দোলনে অবশেষে সেখানে জার শাসনের অবসান ঘটে ও অন্তবর্তীকালীন সরকার নারীদের ভোটের অধিকার মেনে নেয়।

যে দিন এই আন্দোলন শুরু হয় রাশিয়াতে সেদিন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী (সেসময় রাশিয়াতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে চলা হত) ছিল ২৩শে ফেব্রুয়ারি ও রোববার। আর এই দিনটা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ছিল ৮ মার্চ। এরপর থেকেই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বীকৃতি পায়।

এদিন বেগুনি রং কেন পরা হয়?

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওয়েবসাইট বলছে এদিনের রং হলো বেগুনি, সবুজ ও সাদা। বেগুনি রং ন্যায় বিচার ও মর্যাদার প্রতীক। সবুজ দিয়ে বোঝায় আশা ও সাদা মানে পবিত্রতা, যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। এই রংগুলো এসেছে ১৯০৮ সালে যুক্তরাজ্যের উইমেন্স সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইউনিয়ন (ডব্লিউএসপিইউ) থেকে।

নারী দিবস কীভাবে পালিত হয়ে থাকে?

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি ছুটি থাকে। রাশিয়াতেও এদিন সরকারি ছুটি ও ৮ মার্চ ঘিরে তিন বা চারদিন ধরে সারাবিশ্বে ফুল বিক্রি দ্বিগুণ হয়ে যায়।

চীনে স্টেট কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক নারীই ৮ই মার্চ অর্ধদিবস ছুটি পেয়ে থাকেন। ইতালিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে বলা হয় লা ফেস্তা দেলা দোনা। দেশটিতে লজ্জাবতী ফুল দেওয়ার মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে।

২০২৩ সালের নারী দিবসে পেরুর লিমায় নারীদের একটি আন্দোলনের দৃশ্য২০২৩ সালের নারী দিবসে পেরুর লিমায় নারীদের একটি আন্দোলনের দৃশ্য/ ছবি: সংগৃহীত

ইতালিতে এই দিনে লজ্জ্বাবতী ফুল উপহার দেওয়ার এই রীতির উৎপত্তি কীভাবে তা পরিষ্কার নয়, তবে ধারণা করা হয় রোমে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই এর চল শুরু হয়।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পুরো মার্চ মাসকেই নারীদের ইতিহাসের মাস হিসেবে দেখা হয়। প্রতি বছর এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে একটা ইশতেহার বের করা হয়, যাতে বছরজুড়ে সবাই আমেরিকান নারীদের অর্জনগুলোকে সম্মান জানাতে।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।