‘লুট’ হওয়া ব্যাংকগুলোর সম্পদ পর্যালোচনা করবে ৩ আন্তর্জাতিক সংস্থা

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ‘আত্মসাতের’ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর সম্পদ পর্যালোচনায় তিনটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফার্মগুলো হলো- কেপিএমজি, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (ইওয়াই) ও ডেলয়েট।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এসব তথ্য জানান। তার আশা, এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সমর্থন ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক জবাবদিহিতার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর জানান, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে কেনা সম্পদ খুঁজে বের করতে ও দায়ীদের বিচারে সহায়তা করতে ১১টি যৌথ তদন্ত দলও গঠন করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তদন্তে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আত্মীয়দের নজরদারিতে রাখা হবে।
আহসান মনসু বলেন, তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনটি আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম এরই মধ্যেই তাদের কাজ শুরু করেছে। আমরা সম্পদের কার্যকারিতা, দায়বদ্ধতা ও কারা ওই সম্পদ গ্রহণ করেছে তা মূল্যায়ন করবো। পাশাপাশি ফরেনসিক অডিটও পরিচালিত হবে।
এর মধ্যে কেপিএমজি নিশ্চিত করেছে যে তাদের শ্রীলঙ্কা শাখাকে এই পর্যালোচনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ইওয়াই ও ডেলয়েট এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
আহসান মনসুর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অধীনে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আহসান মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়। শেখ হাসিনা ও তার শাসনামলে লুট হওয়া প্রায় ২ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ২ লাখ কোটি টাকার তহবিল পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, মূলত ছয়টি ব্যাংককে লক্ষ্য করে এই পর্যালোচনা চালানো হবে, যার মধ্যে পাঁচটিই সাইফুল আলম ওরফে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। এস আলম গ্রুপের সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যাতে পর্যালোচনার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন থাকে।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোহাম্মদ সাইফুল আলমের দুই ছেলেসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। ঢাকার একটি আদালত এই মামলায় বেশ কয়েকটি সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে।
তবে এস আলমের আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, তারা আন্তর্জাতিক সালিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করতে প্রস্তুত।
এদিকে, তবে যুক্তরাজ্যসহ দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ খুঁজে বের করতে ও পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সহায়তাও নিচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই কাজে যে প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা চাওয়া হয়েছে, তার মধ্যে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কেন্দ্র ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগও রয়েছ। বাংলাদেশ অন্য দেশ থেকে আইনি সহায়তা চাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ও লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুর্নীতির তদন্তে তার নাম উঠে আসার পর তিনি পদত্যাগ করেন। টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
এসএএইচ