সালমান খানের ‘ব্যাটেল অব গালওয়ান’ নিয়ে চীনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
সালমান খান অভিনীত যুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘ব্যাটেল অব গালওয়ান’–এর সম্প্রতি প্রকাশিত টিজার দেখে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করেছে, এই সিনেমায় উপস্থাপিত ঘটনাবলি প্রকৃত তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ও এটি বাস্তবতাকে বিকৃত করেছে।
সালমান খান অভিনীত এই সিনেমাটি ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন অপূর্ব লাখিয়া। এতে সালমান খানের সঙ্গে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রাঙ্গদা সিং। এছাড়া অভিনয়ে রয়েছেন জেইন শ, অঙ্কুর ভাটিয়া ও বিপিন ভরদোয়াজ।
এই চলচ্চিত্রে সালমান খান অভিনয় করেছেন কর্নেল বিক্কুমল্লা সন্তোষ বাবুর চরিত্রে। তিনি ছিলেন ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ও গালওয়ান সংঘর্ষে ‘অনুপ্রবেশকারী’ চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) সেনাদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
চীনা গণমাধ্যমের দাবি
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০২০ সালের জুন মাসের সংঘর্ষ নিয়ে সিনেমায় যেসব দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মেলে না। বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে ‘ব্যাটেল অব গালওয়ান’ সিনেমাটিকে ‘অতি নাটকীয়’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কর্নেল সন্তোষ বাবুর আত্মত্যাগী ভূমিকা নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে ও তাকে ‘তথাকথিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বলিউডের সিনেমাগুলো মূলত আবেগনির্ভর ও বিনোদনমুখী উপস্থাপনা দেয়। তবে কোনো মাত্রার সিনেম্যাটিক অতিরঞ্জন ইতিহাস বদলাতে পারে না বা চীনের সার্বভৌম ভূখণ্ড রক্ষায় পিএলএর দৃঢ় অবস্থানকে টলাতে পারে না।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, গালওয়ান উপত্যকা চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ও ২০২০ সালের সংঘর্ষের জন্য ভারতীয় সেনারাই দায়ী। সেখানে বলা হয়, ভারতীয় সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) অতিক্রম করে সংঘর্ষে উসকানি দেন।
চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড সীমান্ত এলাকার স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, চীনা সেনাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে, দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিষয়ে হওয়া চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতিমালা ভঙ্গ করেছে।
ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে, ওই সংঘর্ষে তাদের ২০ জন সেনা নিহত হন। তবে গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারত হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখিয়েছে ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। বিপরীতে, চীন প্রথমে কোনো হতাহতের কথা অস্বীকার করলেও পরে মাত্র চারজন সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে, যা প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় অনেক কম বলে ভারতীয় পক্ষের দাবি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারত বিশেষ করে বলিউড সিনেমার মাধ্যমে ‘জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দেওয়ার’ চেষ্টা করে, যা দেশটির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। চীনা সামরিক বিশ্লেষক সং ঝংপিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, কোনো সিনেমা যতই অতিনাটকীয় হোক না কেন, একটি দেশের পবিত্র ভূখণ্ডের ওপর তার কোনো প্রভাব পড়ে না।
ভারতে প্রতিক্রিয়া
চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা অশোক পণ্ডিত বলেন, চীনের এই প্রতিক্রিয়া অপ্রত্যাশিত নয়। তার ভাষায়, একজন ভারতীয় নির্মাতা যখন সিনেমা বানান, তখন তিনি অবশ্যই শত্রু দেশের কর্মকাণ্ড তুলে ধরবেন। আমাদের দেশ শক্তিশালী এবং আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে দেশের জন্য লড়াই করে। গ্লোবাল টাইমসের এই প্রতিক্রিয়া আসলে তাদের নিরাপত্তাহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।
অভিনেতা ও প্রযোজক রাহুল মিত্রও বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, গ্লোবাল টাইমস একটি সরকারি মুখপত্র, তাই তাদের এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক নয়। তার মতে, যথাযথ গবেষণা ছাড়া কোনো ভালো সিনেমা তৈরি হয় না। অপূর্ব লাখিয়া ও সালমান খানের মতো নামী ব্যক্তিরা শুধু সিনেমা বানানোর জন্য তথ্য বিকৃত করবেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, সিনেমাকে ‘জাতীয়তাবাদী মেলোড্রামা’ বলাটা চীনা গণমাধ্যমের অযৌক্তিক মন্তব্য। কারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং গবেষণা তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভারতের অবস্থান
ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানানো হয়েছে। সরকারি সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, এই সিনেমার সঙ্গে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। সূত্রের ভাষায়, ভারত মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী দেশ ও সিনেমাও সেই স্বাধীনতার অংশ। ভারতীয় নির্মাতারা তাদের শিল্পীসত্তার স্বাধীনতা অনুযায়ী সিনেমা বানাতে পারেন। এই সিনেমা নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তারা ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। সরকারের এ ক্ষেত্রে কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ