আদালত অবমাননার মামলা
হাসিনার পক্ষে নিয়োগ দেওয়া আইনজীবী আমিনুল গণি টিটুকে প্রত্যাহার
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল) আমিনুল গনি টিটুকে প্রত্যাহার করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (২৫ জুন) ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় আমিনুল গনি দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল তার আবেদনে সম্মতি দেন।
শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হয়। অভিযোগ ওঠে, আমিনুল গনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৪ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেন, ট্রাইব্যুনালে আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ড থাকতে হবে, যাতে তিনি যথাযথ ও স্বাধীনভাবে ট্রাইব্যুনালের সামনে আসামির প্রতিনিধিত্ব করেন।
এরপরের দিনই শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেন আইনজীবী আমিনুল গনি।
গত ১৯ জুন শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুলের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটুকে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী) নিযুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া ওইদিন আদালত অবমাননার এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ শুনানির শুরুতেই অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান বলেন, এখানকার বিষয়গুলো নতুন। একটু দেখতে হবে। এক সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। পরে আদালত আগামী বুধবার (২ জুলাই) দিন ঠিক করেন।
শুনানিতে আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু বলেন, ‘আমি প্রসিকিউশনের বক্তব্যের পর আমি বলবো’। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা কিছু অ্যাডভান্স তথ্য পেয়েছি। আপনি এই ক্লায়েন্ট সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপিন বলেছেন শেখ হাসিনার ফাঁসি চান। এরপর তাকে আর রিপ্রেজেন্ট করতে পারেন না। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন।’
আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু বলেন, ‘আমাকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দিয়েছেন। আমি সম্মানিতবোধ করছি। আমি আমার ক্লায়েন্টকে রিপ্রেজেন্ট করবো। আমি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। আমার ৩৬ বছরের পেশাগত জীবনে অসততা নেই।’
ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনি এমন লেখা লিখেছেন?’ আইনজীবী আমিনুল গনি বলেন, ‘হ্যাঁ লিখেছি। তবে সেটা ৫ আগস্ট সকালে। সেটি আমার ব্যক্তিগত বিষয়। পেশার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। মামলার বিষয়ে আমি সৎ।’ এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আপনি এটা করতে পারেন না।’
আরও পড়ুন:
আদেশর পর প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি ও পলাতকদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। আজ আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনি (টিটু)। তার জায়গায় মো. আমির হোসেনকে এই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আহমেদের মধ্যে কথোপোকথনের অডিও ভাইরাল হলে গত ৩০ এপ্রিল তাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা চান ট্রাইব্যুনাল। তাদের হাজির হয়ে বা আইনজীবীর মাধ্যমে কথোপোকথনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। ২৫ মে নির্ধারিত তারিখে তারা হাজির হননি কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। পরে দুই আসামি স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। নির্দেশ অনুযায়ী দুটি সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এরপরও তারা হাজরি হননি।
গত ৩০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারাদেশে ২২৭টি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতা সাকিল আহমেদের সঙ্গে কথোপোকথনে বলেছেন, ‘‘যারা মামলা করেছে তাদের মারার লাইসেন্স পেয়েছি।’’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এদের বাড়িুঘর ভাঙচুরের জন্য তিনি নির্দেশ দেন। পুলিশ কর্মকর্তাদেরও হুমকি দেন। কথোপোকথনের মাধ্যমে তদন্ত সংস্থার কাছে স্পষ্ট হয়েছে এরা দুজন (শেখ হাসিনা ও শাকিল আহমেদ) সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মনে করেছেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে ভয় পাবেন। পরে পদক্ষেপ নিতে আবেদন করলে আদালত অবমাননার নোটিশ ইস্যু করা হয়।
একই ট্রাইব্যুনালে ‘২২৭ হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা মামলা শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এফএইচ/এসএনআর/এমএস