ট্রাইব্যুনালে হাসিনা-তাপসের অডিও
‘আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, ওরা পুড়িয়ে দিলো...’
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের সময় শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, ওরা পুড়িয়ে দিলো...।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ ফজলে নূর তাপসের টেলিফোন আলাপে হাসিনা তাপসকে জানান, আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্থাপনায় আগুনের নির্দেশও তিনিই দিয়েছিলেন! এর আগে এই টেলিফোন আলাপেই শেখ হাসিনা লিথাল উইপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে প্রকাশ পায়।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ এ শেখ হাসিনা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও শোনানো হয়। শেখ হাসিনাকে সেখানে এ কথা বলতে শোনা গেছে। শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। তিনি এই মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।
জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে পাঁচটি অডিও দেন তানভীর হাসান। এর মধ্যে চারটি অডিও প্লে (চালানো) করা হয়। যার মধ্যে দুটি অডিও শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের। ট্রাইব্যুনালের আজকের এই বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তাপসের আলাপে শোনা যায়, তাপস বলছেন, জ্বি আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, সব জায়গায় আগুন, বিআরটি বিটিআরসি বন্ধ করে দিয়েছে, পোড়াইয়া দিছে, বিটিভি পোড়াইয়া দিছে এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ, সব পোড়াইয়া দিছে, এখন চলবে কীভাবে! তাপস বলেন, জ্বি, এটা ভালো হইছে, জ্বি। শেখ হাসিনা বলেন, না.. পোড়াইয়া দিছে, মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি যা যা পোড়াতে... ও আমাদের সেতু ভবন পোড়াইছে। তাপস বলেন, জি, ওরা রাতে মনে হয় আরো ব্যাপক আক্রমণ করবে। শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেটা পোড়াইছে..।
জবানবন্দিতে তানভীর হাসান বলেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড (সিডিআর) এনটিএমসি থেকে জব্দ করা হয়। জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লেথাল উইপন ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোম্বিং করার কথা বলেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলে।
এরপর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা ফোন আলাপের যেসব অডিও শুনেছেন, তাতে শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, (যা যা পোড়াতে..) ওরা পুড়িয়ে দিলো সেতু ভবন।’ তার মানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ উনি দিয়েছেন। কিন্তু উনার কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পুড়িয়ে অন্য স্থাপনা পোড়ানো হয়েছে।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন পরে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেন।
এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপ-পরিচালক মো. আলমগীর (পিপিএম)।
সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর চলতি বছরের ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর ৩ আগস্ট থেকে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে এখনো চলছে।
এফএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম