করোনা ‘সংক্রামক রোগ’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ‘সংক্রামক রোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ গেজেট জারি করতে বলা হয়েছে। তবে, সম্ভব হলে বুধবার রাতের মধ্যেই গেজেট প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
গেজেট জারি হয়েছে কি-না, তা আদালতকে জানাতে সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলা হয়েছে। গেজেট প্রকাশ না করলে করোনার বিষয়ে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও এ সময় জানতে চান আদালত।
তবে, আদালত করোনা নিয়ে রিট আবেদনের ওপর বিস্তারিত আদেশ দেবেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার। এ সময় আদালত আরও বলেন, যেদিন রোগের গুরুত্ব জানা গেছে, ওইদিনই মহামারি ঘোষণা করা উচিত ছিল।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে বুধবার (১৮ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করেন। তার সঙ্গে আবেদনকারী নিজেও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশিস ভট্টাচার্য।
ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব এ রিট আবেদন করেন।
আদেশের পর ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ এর ৪ (ঘ) ধারায় ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ ২৩ রোগকে সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই তালিকায় করোনার নাম নেই। ওই আইনে বলা হয়েছে, নতুন কোনো সংক্রামক রোগ হলে বা পুরোনো রোগের সংক্রমণ হয় সেক্ষেত্রে সরকার সংক্রামক রোগ হিসেবে গেজেট জারি করবে। কিন্তু করোনা নিয়ে সরকার গেজেট জারি করেনি। তাই আদালত করোনোকে সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে গেজেট জারি করতে বলেছেন।
রিট আবেদনে দেশের সব আদালতে (সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত) অবকাশকালীন ছুটি ঘোষণার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে আগামী মে, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে যে অবকাশকালীন ছুটি রয়েছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করে অবকাশের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
নিম্ন আদালতে ডিসেম্বরে যে অবকাশ থাকে তা এগিয়ে এনে এখনই ছুটি ঘোষণার আবেদন জানানো হয় রিটে। এছাড়া বিদেশ থেকে আগত বাংলাদেশিদের বন্দর থেকেই বাধ্যতামূলক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনে আইন, স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র ও বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে ফিরছেন। তাদেরকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিলেও অনেকেই তা মানছেন না। এ কারণেই এ রিট আবেদন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। দেশে এখন পর্যন্ত ১৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্ত তিনজনের দুজন ইতালিফেরত, অন্যজন কুয়েত থেকে এসেছেন।
সারাবিশ্বে মৃতের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত দুই লাখের অধিক মানুষ। স্বাভাবিকভাবে মানুষের মধ্যে এ ভাইরাস নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা লোকসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এফএইচ/এফআর/এমএস/এমকেএইচ