মেয়র আইভীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য: আইনজীবী খোকনের জামিন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে নিয়ে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগে করা মামলায় নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য খোকন সাহার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ৫০০ টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। ট্রাইব্যুনালের পেশকার নজরুল ইসলাম শামীম বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে দুইজনের নামে মামলা করেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। আসামিরা হলেন- প্রদীপ দাস (হিন্দু লাইভস ম্যাটারস ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলের স্বত্বাধিকারী) ও নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবী খোকন সাহা।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শাহ জালাল ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় প্রদীপ দাস ও খোকন সাহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
২০২২ সালের ২১ এপ্রিল মামলার প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রদীপ দাস ও খোকন সাহার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, “গত ১২ আগস্ট আসামি প্রদীপ দাসের চালু করা ইউটিউব চ্যানেল বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হিন্দু সম্প্রদায়ের খবর প্রচার করে। বাংলাদেশে প্রতিদিন হিন্দুরা ধর্ষণ, জোরপূর্বক বিয়ে, ধর্মান্তরিত, ভূমি দখল এবং আরও অন্যান্য বিষয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে বিগত ৫০ বছর প্রায় ৪০ মিলিয়ন হিন্দু নিধন করা হয়েছে। এটা ধীরপ্রক্রিয়ায় একটি গণহত্যা। এ ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের মূল উদ্দেশ্য মিথ্যা, মানহানিকর, উসকানিমূলক, ভিত্তিহীন সংবাদ ও ছবি ওয়েবসাইটে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। আসামি প্রদীপ দাস তার নিয়ন্ত্রণাধীন চ্যানেলে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ভিডিও আপলােড করেন যার প্রতিটি ভিডিওতে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।’’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘‘গত ১৩ নভেম্বর ‘নারায়ণগঞ্জ মেয়র আইভীকে: খোকন শাহা, হাজার কোটি টাকা মূল্যের হিন্দুদের দেবােত্তর সম্পত্তি ফিরিয়ে দিন’ ও ‘এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের হিন্দুদের দেবােত্তর সম্পত্তি মেয়র আইভীর পরিবারের দখলে। মন্দিরের সেবায়েত কুম আতঙ্কে হিন্দুরা।’ আসামি প্রদীপ দাসের ‘হিন্দু লাইভস ম্যাটার’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে আসামি খোকন সাহার লাইভ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। ভিডিওতে আসামি খোকন বলেন ‘হিন্দুদের দেবােত্তর সম্পত্তি বাদিনী তথা মেয়র মহােদয়ের দাদা মাহাতাব উদ্দিনসহ পরিবার বা অবৈধভাবে দখল করে আছেন। নেত্রী আপনি আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিভাবক, আপনি আমাদের অভিভাবক, যারা আওয়ামী লীগ করে এ দখলদারদের নমিনেশন দেবেন না, তাদের আপনি আনবেন না।’’
‘‘মেয়র আইভী হিন্দুদের ভােট নেয়। নিয়ে দীপাবলি (কালীপূজা) করে সিন্দুর দিয়ে কালীমাকে প্রণাম করে। আমি হিন্দুসমাজকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করছি এবং বলেছি যারা দেবােত্তর সম্পত্তি গ্রাস করে তাদের আপনারা ভােট দেবেন না। যারা দেবােত্তর সম্পত্তি খায় তাদের যেন জননেত্রী শেখ হাসিনা নমিনেশন না দেয় এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে বলেছি যারা দেবােত্তর সম্পত্তি খায় তাদের কেন আপনারা ভােট দেবেন।’’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘‘গত ১ ডিসেম্বর আসামি প্রদীপ দাসের ইউটিউব চ্যানেলে ‘মেয়র আইভী পরিবারের দখলে কোটি টাকার দেবােত্তর সম্পত্তি উদ্ধারে গণঅনশন’ শিরােনামে অপর একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওতে আসামি খোকন বলেন- ‘হিন্দু কমিনিউটির ভােট নেবেন, সম্পত্তি দখল করে নেবেন দেবােত্তর, এটা হবে না। আমি নেত্রীকে অলরেডি মেসেজ পাঠিয়েছি, নেত্রীকে বলেছি, এ সব যারা অপরাজনীতি করে। যারা হেফাজত নিয়ে কথা বলেন, হেফাজত যারা, যারা হেফাজতের ভােটে, যাদের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক, সেই বিষয়টি আমি বলেছি। আপনি করবেন সরকারি দল, করবেন আওয়ামী লীগ, এটা হবে না। আপনি আওয়ামী লীগ করবেন দেবােত্তর সম্পত্তি দখল করবেন, সেটা হবে না।’’
ভিডিওতে আসামি প্রদীপ দাসের উদ্দেশে খোকন সাহা বলেন, ‘‘দাদা আমি আপনার সহযোগিতা চাই। এ যে আগে আমেরিকার যে প্রেসিডেন্ট ছিল। বিল.. হিলারি, হিলারি কিন্তু আইভীর পক্ষে, ঘটনা বুঝছেন? আপনি যদি সম্ভব হয় বিল ক্লিনটনসহ হিলারিসহ তাদের আপনি এ মেসেজটা দেবেন। যারা বাংলাদেশের দেবােত্তর সম্পত্তি খায়।’’
‘‘আসামি প্রদীপ দাস ও খোকন সাহা মামলার বাদিনী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে অপমান, অপদস্ত বা হেয়প্রতিপন্ন করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ইলেকট্রনিকস বিন্যাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ বা সম্প্রচার করে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি আইন ২০১৮’ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে।’’
জেএ/এমএএইচ/জিকেএস