প্রাথমিকে পিটিবিটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত আপাতত বহাল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৮ পিএম, ০৭ মে ২০২৩
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১৮ মাসের ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি অ্যাডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স বাতিল করে ১০ মাস মেয়াদি প্রাইমারি টিচার বেসিক ট্রেনিং (পিটিবিটি) কোর্স চালুর ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। ফলে পিটিবিটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত আপাতত বহালই থাকছে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার (৭ মে) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। রিটকারী পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের ১০ মাসের পিটিবিটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত স্থগিত

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডিপিএড কোর্স বাতিল করে ১০ মাস মেয়াদি পিটিবিটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট।

ওইদিন এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন।

একই দিন জারি করা রুলে পিটিবিটি কোর্স পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ওই দিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শুভ্র বসু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

পরে আইনজীবী শুভ্র বসু জানিয়েছিলেন, গত বছরের ২২ নভেম্বর এবং ১৯ ডিসেম্বর ‘পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রম স্টিয়ারিং কমিটি’র গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আপিল বিভাগে আবেদন করে।

গত বছরের ২২ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রম স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এগুলো হলো ডিপিএডের নাম পরিবর্তিত হয়ে পিটিবিটি হবে। কোর্সের মেয়াদ ১৮ মাসের পরিবর্তে ১০ মাস হবে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হবে।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রম স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রশিক্ষণের মেয়াদ ১০ মাস করার সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যে ৬ মাস প্রশিক্ষণ হবে পিটিআইয়ে এবং বাকি ৪ মাস প্র্যাকটিস টিচিং। ওই ৪ মাসের প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে হবে।

শিক্ষা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে (পিটিআই) নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ সিদ্ধান্তকে ‘আইনের লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে তাদের পক্ষ থেকে গত ১৮ ডিসেম্বর আইনি নোটিশ দেওয়া হয়।

ওই নোটিশের পর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ পিটিআই কর্মকর্তা সমিতির আইন সম্পাদক ও ফেনী পিটিআইয়ের ইনস্ট্রাক্টর (বিজ্ঞান) মোহাম্মদ জাকির হোসেন গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ), জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির উপপরিচালককে (মূল্যায়ন) বিবাদী করা হয়।

বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় চার লাখ।

বর্তমানে দেশের ৬৭টি পিটিআইয়ের অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এটি সব শিক্ষকের জন্যই বাধ্যতামূলক। একসময় এই প্রশিক্ষণ কোর্সটি ছিল এক বছর মেয়াদি। তখন এর নাম ছিল সার্টিফিকেট ইন অ্যাডুকেশন (সিইনএড)। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০–এ এই কোর্সের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে ১৮ মাস (দেড় বছর) করার কথা বলা হয়।

এরপর শিক্ষানীতির সুপারিশ ও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ২০১২ সালে প্রথমে সাতটি বিভাগীয় শহরে অবস্থিত পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় বছর মেয়াদি কোর্স চালু করা হয়। গুরুত্ব বিবেচনা করে এ কোর্সের নাম দেওয়া হয় ‘ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি অ্যাডুকেশন’ বা ডিপিএড।

এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সাল থেকে দেশের সব কটি পিটিআইয়ে এ কোর্স শুরু করা হয়। পিটিআইগুলোর এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কর্তৃপক্ষ হিসেবে ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) কাজ করে থাকে।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।