রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় শতবর্ষী পুকুর দখল, বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ডিআইটির শতবর্ষের পুকুর দখল করে মার্কেট, কাউন্সিলর অফিস নির্মাণ বন্ধ করে পুকুরটি সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রোববার (৪ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ রিট দায়ের করেন।
রিটের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন তিনি নিজেই। রিটে পুকুর দখলের সঙ্গে জড়িত সাবেক কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শতবর্ষী পুকুরটি যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় রাখার জন্যে স্থিতাবস্থা জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
গত ২১ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পুকুর দখল করে মার্কেট ও কাউন্সিলর কার্যালয়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয় বলে জানান আইনজীবী। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সময় যে পুকুরে গোসল, ধোয়ামোছা চলতো, এখন সেই পুকুর মৃতপ্রায়। চারপাশে ভবনের পর ভবন। পুকুরের ভেতরে এমনভাবে দোকান ও মার্কেট করা হয়েছে যে দোকানের পেছনে যে পুকুর রয়েছে সেটি সড়ক থেকে বোঝাই যাচ্ছে না। দিনের বেলা মার্কেট নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকলেও এখনও রাতের বেলা দোকান তুলে পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর গেন্ডারিয়ার ডিআইটির শতবর্ষের এ পুকুরটি দখলের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, যারা দখল করছে তারা মামলার পর মামলা করায় আমরা পেরে উঠছি না। জনস্বার্থে পুকুরটি রক্ষায় সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
রাজউক ১৯৬৩ সালে গেন্ডারিয়ায় ১৩ দশমিক ৫৭ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। এর মধ্যে দুই একরের একটি পুকুরও ছিল। পুকুরটির বয়স বর্তমানে প্রায় ১০০ বছর। সেই পুকুরটিই ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে এখন ভরাট করার প্রতিযোগিতা চলছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গেন্ডারিয়া পুকুরের চারপাশে মার্কেট, দোকান ও বেশ কয়েকটি রিকশার গ্যারেজ। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান সবই সেখানে রয়েছে। এ ছাড়াও পুকুর দখল নিশ্চিত করতে মার্কেটের একাংশে দোতলা ভবনে নিজের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সাহানা আক্তার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানে বেশির ভাগ দোকানের ভাড়া তোলেন বর্তমান কাউন্সিলরের বাবা শহিদুল ইসলাম।
রাজউকের সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুকুরটি রাজউকেরই। এটি দখলে নেওয়ার জন্য প্রভাবশালীরা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে একটি মামলা করে। সে মামলা বহু বছর ধরে চলছিল। এরই মধ্যে বেশির ভাগই দখল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম বলেন, যারা দখল করছে তারা মামলার পর মামলা করায় আমরা পেরে উঠছি না। সর্বশেষ আমরা রিভিউ পিটিশনে হেরে গেছি। আমরা চাই পুকুরটি রক্ষায় রাজউকের বাইরেও কেউ কথা বলুক। জনস্বার্থে পুকুরটি রক্ষায় সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকায় পুকুর ছিল ১০০টি। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯টিতে। পাঁচ বছরে ঢাকায় পুকুর কমেছে ৭১টি।
স্থানীয়রা বলছেন, ২০০৪ সালেও রাজউকের পুকুরে গোসল করেছেন তারা। এরপর থেকেই মূলত পুকুরটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে। স্থানীয়দের ব্যবহারের সুযোগ কমতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দখলের শুরুতে পুকুরটিতে প্রচুর আবর্জনা ফেলা হয়। গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সব ধরনের বর্জ্যে পুকুরটি ভরে ওঠে। তারপর স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুরপাড়ে টং দোকান ও রিকশার গ্যারেজ নির্মাণ করে। তখন পুকুরটির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহানা আক্তার, যার বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ উঠেছে তিনি বলেন, রাজউক জায়গাটি অধিগ্রহণ করেছে কিন্তু এখন এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি। সরকারি নয়। উচ্চ আদালত থেকে জাকির হোসেন এ রায় পেয়েছেন। আমি তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি।
এফএইচ/এসএনআর/এমএস