আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার ১৯ বছর

তিন পক্ষের আপিল শুনানি আটকে আছে ৭ বছর

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪৮ এএম, ০৭ জুন ২০২৩
ফাইল ছবি

২০০৪ সালে স্থানীয় এক জনসভায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারকে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের বিষয়ে হাইকোর্টেও শুনানি শেষে রায় হয়। এরপরও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি।

বিচারিক আদালতের রায়ের পরে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ, বাদীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও বাদীপক্ষের করা লিভ টু আপিল স্বাভাবিক নিয়মে শিগগির শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে আসামিপক্ষের কারণে এ আপিলের শুনানি হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে মামলার নথি প্রস্তুত করতে কিছু সময় লেগেছে। এরপর আসামিপক্ষ কয়েক দফা সময় নিয়েছে। এছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনানির অপেক্ষায়। এসব কারণে মামলাটির বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। তবে এখন শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুত।

আরও পড়ুন>> ৯ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলা

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার ঘটনায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর হাইকোর্ট বিভাগের রায় হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল যখন তারা শুনানির উদ্যোগ নেবে তখন বিষয়টি আসবে। এখন দণ্ডপ্রাপ্ত যারা তাদেরই দায়িত্ব হচ্ছে এটা শুনানির জন্য নিয়ে আসা। তা না হলে আমরা মেনশন করে অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে শুনানির জন্য উদ্যোগ নেবো।

এদিকে চলতি বছরই মামলাটির শুনানি হবে বলে আশা করছেন আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ড. সাইফুদ্দিন মাহমুদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আপিল আবেদনগুলো শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠেছে। আশা করছি চলতি বছরই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী আবেদনটি শুনানি শুরু করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, মামলাটি শুনানির জন্য প্রথমে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় (কজলিস্ট) ছিল। এদিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ শুনানি আট সপ্তাহ পিছিয়ে দেন। এরপর ৪ মার্চ মামলাটি আবার কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু এদিন নথি না আসায় শুনানি হয়নি। সেই থেকে বারবার শুনানি পিছিয়েছে।

এরপর মহামারি করোনার প্রকোপের কারণে সবকিছুর সঙ্গে থমকে পড়ে স্বাভাবিক বিচারকাজও। আইনজীবীরা বলছেন, সবশেষ ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় (কজলিস্ট) ছিল। সেদিন আপিল বিভাগে লেখা হয়, আপাতত কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো। এখন লিভ টু আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এরপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কাযর্তালিকায় উঠলেও সেটি আর শুনানি হয়নি।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ জুন আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ১১ জনকে খালাস দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ অন্য ছয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতে দণ্ড পাওয়া জীবিত ২৬ আসামির মধ্যে ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক থাকায় তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। এসব আসামির মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক। এছাড়া দুজন মারা গেছেন।

আরও পড়ুন>> বছর ঘুরলেও থমকে আছে রিট শুনানি

বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া ওই ১১ আসামি হলেন- আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে সাতজনের বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমেছে এবং বাকি একজনের আগের সাজাই বহাল রয়েছে।

এদিকে, মারা যাওয়া দুই আসামির করা আপিলের নিষ্পত্তি করেছেন আদালত। আর মামলার মোট ৩০ আসামির মধ্যে দু’জন বিচারিক আদালতেই খালাস পেয়েছিলেন।

হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ছয়জন হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।

মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন- মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, ছোট জাহাঙ্গীর (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম ওমশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক)। যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি হলেন নুরুল আমিন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় তার সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়ার পর মারা যাওয়ায় আল-আমিন ও রতন ওরফে ছোট রতনের আপিলের নিষ্পত্তি করেন হাইকোর্ট।

এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল বিভাগের মামলা শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলেও সেটি শুনানি থেকে বেশ কয়েকবার বাদ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। সবশেষ ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি শুনানির জন্য এলেও আর শুনানি হয়নি। ওইদিন এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ১১ জনের সাজা বাড়ানোর জন্য করা আপিল আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসানউল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরদিন আহসানউল্লাহ মাস্টারের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এফএইচ/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।